গত দুই সপ্তাহ থেকে আবারও বাজারে আগুন লাগতে শুরু করেছে। সবজি থেকে শুরু করে মাছ-মাংস এমনকি ডিমের দাম দফায় দফায় বাড়ছে। এতে মানুষের মাঝে অস্বস্তি দানা বেধেছে। একমাস আগেও বাজার দরে কিছুটা স্বস্তি ছিল। কিন্তু সে চিত্র এখন পুরোটাই ভিন্ন। ক্রেতা বিক্রেতা মনে করছেন, সিন্ডিকেটের কারণে আবারও বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। ফলে সরকারের পক্ষ থেকে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তার কোনো সুফল মিলছে না।
সম্প্রতি বন্যার কারণে ঢাকার পার্শ্ববর্তী কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, নেত্রকোনা, নরসিংদীসহ বেশকিছু এলাকায় সবজি ক্ষেত ডুবে যাওয়ায় সংকট দেখা দেয়। কিন্তু তখনও সবজির দাম কিছু কম ছিল। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে এখন চড়া।
গত সপ্তাহে ৫০০ টাকার উপরে দেশি মুরগি কিনেছেন আজিদুল ইসলাম, আজ কিনেছেন ৫০০ টাকায়। তবে কেজিতে বেড়েছে অন্য মুরগির দাম। তিনি জানান, বাজারে তো সরবরাহ ঠিক আছে। তাহলে তো একটা রিজনেবল প্রাইস থাকার কথা। কিন্তু আমরা সেটা পাচ্ছিনা। যদি নিয়মতান্ত্রিকভাবে সবকিছু করা হয় তবে বাজার দাম কমে আসার কথা।
এই ক্রেতা মনে করেন, যারা উৎপাদক আছেন তারা যদি সরাসরি বিক্রেতার কাছে পণ্যটি বিক্রি করে, মাঝে যদি কোনো ধরনের বাহক না থাকে তাহলে মুরগি কম দামে বিক্রি করা সম্ভব। বাজার ব্যবস্থায় যদি কোনো ধরনের কারসাজি অথবা সিন্ডিকেট না থাকে তাহলে উৎপাদক এবং বিক্রেতা দুজনই লাভবান হবেন। পাশাপাশি ক্রেতা কম দামে পণ্যটি কিনতে পারবেন।
এই সময়ে এসে যদি সেই পুরাণ কালের মধ্যে স্বত্বভোগী এবং সিন্ডিকেট থাকে তাহলে বাজার ব্যবস্থায় সুফল আসবেনা বলেও মনে করেন তিনি।
প্রায় দুই যুগ ধরে ঢাকায় আছেন রিকশাচালক কুদ্দুস। রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকেন তিনি। এই দিনমজুর বলেন, আগে আমাদের চারজনের পরিবারে যে খরচ হতো এখন তা দ্বিগুণ হয়েছে। সিন্ডিকেটের কারণে বাজার ব্যবস্থা কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বলে মনে করেন তিনি।
কারওয়ান বাজারে কাপড় বিক্রেতা রিয়াজুল বলেন, আমরা কিন্তু কাপড়ের দাম বাড়াই না। কিন্তু ঠিকই বাজার বিক্রেতারা দাম বাড়ান। তিনিও মনে করেন, খুচরা নয়, পাইকারি দরে যারা বিক্রি করেন এবং মাঠ পর্যায় থেকে যারা ডিম, মাংস ও সবজি কিনে এনে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন তারাই মূলত দাম বাড়ান-কমান। তাদেরকেই আগে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তারাই দাম বৃদ্ধির হোতা বলে দাবি করেন তিনি।
মুরগি বিক্রেতা শাহীন জানান, তাদের কোনো দোষ নেই। মূলত তারা বেশি দামে বিক্রি করছেন না। প্রতি কেজি বয়লার তাদের কেনা পড়ছে ১৯৫ টাকা। তারা মাত্র ৫ টাকা লাভ করে প্রতি কেজি বিক্রি করছেন।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) কারওয়ান বাজারে লাল ও সাদা ডিম ১৬৫ থেকে ১৭০, দেশি মুরগির ডিম ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতাদের বাজারের তালিকায় ডিমের দাম কম থাকায় কিছুদিন আগেও ডজনের কিনেছেন অনেকে। কিন্তু হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়ায় সেই সংখ্যা এখন কমে আসছে।
যদিও সরকার থেকে এই ডিম বিক্রি নিয়ে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিক্রেতারা বলছেন, সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি সম্ভব নয়। কারণ, তারা যে দামে এখন কিনছেন সেই দরেও সরকার বেধে দিতে পারেনি।
কারওয়ান বাজারের ডিম বিক্রেতা মিলন বলেন, সরকার ডিমের হালি নির্ধারণ করেছেন ৪৮ টাকা। কিন্তু আমাদের কেনা পড়ে ৫৩ টাকা। তাহলে আমরা কয় টাকা লাভে বিক্রি করব বলেন!
বিক্রেতারা বলছেন, ডিমের দাম এই মুহূর্তে কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ, গরমে ডিমের দাম কমে। শীতে ডিমের দাম কিছুটা বাড়ে। আসছে শীতে এই ডিম প্রতি পিস ১৮ টাকাও খেতে হতে পারে বলে আশঙ্কা তার। আর হাঁসের ডিম প্রতি পিস খেতে হবে ২৫ টাকা। আজ হাঁসের ডিমের ডজন ২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।