কানপুরের স্টেডিয়ামের সাপেক্ষে রেকর্ড রানতাড়া করে জিততে হতো ভারতকে। তবে সেই রেকর্ডটাও খুব একটা আহামরি কিছু ছিল না ভারতের জন্য। এই মাঠে এর আগে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড ৮৩। ভারতের সামনে জয়ের জন্য টার্গেট ৯৫ রানের। হাতে দুই সেশনের খেলা বাকি। রান তাড়ায় শুরুতে দুই উইকেট হারালেও খুব একটা ভাবনায় পড়তে হয়নি তাদের।
তরুণ ওপেনার যশস্বী জয়সওয়াল আর অপরপ্রান্তে অভিজ্ঞ বিরাট কোহলি ঠিকই ভারতকে নিয়ে গেলেন জয়ের বন্দরে। কানপুরের বৃষ্টিবিঘ্নিত টেস্টে খেলা হলো সর্বসাকুল্যে আড়াই দিন। দারুণ বোলিং-ব্যাটিং আর আগ্রাসী পরিকল্পনাতেই ভারত আরও একবার প্রমাণ করল কেন তারা টেস্টের ‘নাম্বার ওয়ান’।
কানপুরে টাইগারদের হারাল ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে। এর আগে চেন্নাই টেস্টেও সফরকারীদের হারতে হয়েছিল ২৮০ রানের বড় ব্যবধানে। দুই ম্যাচের সিরিজে ধবলধোলাই হলো নাজমুল হোসেন শান্ত বাহিনী।
অথচ কানপুরের এই টেস্টের মাঝের দুই দিনের খেলা বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার পর ফলাফল ড্র ধরে নিয়েছিল অনেকেই। প্রথম দিনে ৩৫ ওভারে ৩ উইকেটে ১০৭ রান করার পর সেদিন দেড় সেশনের বেশি সময় বৃষ্টিতে নষ্ট হয়। মাঝের দুইদিনও বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার পর গতকাল (সোমবার) চতুর্থ দিনে ৩৯.২ ওভার ব্যাট করে আরও ১২৬ রানে তুলে অলআউট হয় বাংলাদেশ। সেটি দ্বিতীয় সেশনের শুরুর দিকেই। চতুর্থ দিনের দ্বিতীয় সেশনে এসে শেষ হয় কেবল এক ইনিংস। কানপুর টেস্টের ভাগ্যে ড্র দেখে ফেলেছিলেন অনেকেই।
কিন্তু ভারত এই ম্যাচের চিত্রনাট্য নতুন করে লিখলো দ্বিতীয় সেশনের পর থেকে। নিজেদের প্রথম ইনিংসে বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে মাত্র ৩৫ ওভার ব্যাটিং করেই বাংলাদেশের ২৩৩ রান টপকে ৫২ রানের লিড নিয়ে নেয় ভারত। মারকাটারি ব্যাটিংয়ের সুবাদে টেস্ট ক্রিকেটে দ্রুততম ৫০, ১০, ১৫০, ২০০ এবং ২৮৫ রানের বিশ্বরেকর্ড নিজেদের করে নেয় ভারত। এরপর ভারত ডিক্লেয়ার করলে আবার ব্যাট করতে বাধ্য হয় টাইগাররা। সেখানেও ছিল দুর্ভোগ। শেষ বিকেলে ব্যাট করতে নেমে ২৬ রানেই ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
৫ম দিনের সকালে বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল যতটা সময় ব্যাট করে যাওয়া। ম্যাচে হারের বদলে ড্র আনতে চেয়েছিলেন টাইগার ব্যাটাররা। কিন্তু, ভাগ্যটাই যে বাংলাদেশের পক্ষে নেই। এর আগে ২০২১ সালে পাকিস্তান এবং ২০১৯ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বৃষ্টিবিঘ্নিত টেস্ট হেরেছিল বাংলাদেশ। ৫ম দিনে সেটারই চিত্রনাট্য টাইগাররা লিখেছে আরেকবার।
দিনের তৃতীয় ওভারে মুমিনুল হকের উইকেট বাদ দিলে প্রথম ১৫ ওভার বাংলাদেশ খেলেছিল বেশ ভালোই। ওপেনার সাদমান ইসলাম এবং নাজমুল হোসেন শান্ত দুজন মিলে গড়েছিলেন ৫৫ রানের জুটি। ভারতের মাটিতে প্রথম বাংলাদেশি ওপেনার হিসেবে ফিফটিও পেয়ে যান সাদমান। তবে সাদমানের ফিফটির ঠিক আগেই বাংলাদেশের ইনিংসে আসে ধাক্কা। রবীন্দ্র জাদেজাকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ব্যাটে বল পাননি শান্ত। বল আঘাত করে স্ট্যাম্পে। ৯১ রানে বাংলাদেশের তৃতীয় উইকেটের পতন।
এখান থেকেই বাংলাদেশের ধসের শুরু। ৯১ রানে ২ উইকেট থেকে বাংলাদেশের স্কোর হয় ৯৪ রানে ৭ উইকেট। মাঝে ৩ রান তুলতেই নেই ৫ উইকেট। আকাশ দীপের বলে অফ স্টাম্পের বাইরের বলে শট খেলতে গিয়ে জয়সওয়ালের হাতে ক্যাচ দেন সাদমান। লিটন এসেছিলেন। ১ রানের বেশি করা হয়নি তারও। জাদেজার লাফিয়ে ওঠা বলে খোঁচা দিতে গিয়ে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে ঋষভ পান্তের হাতে। এই বিপর্যয়ের শেষ উইকেট সাকিব আল হাসানের। ২ বলে শূন্য করে ফেরেন বাংলাদেশের এই অলরাউন্ডার।
জাসপ্রিত বুমরাহর গুড লেংথ বলটিতে মিরাজের ব্যাট ছুঁয়ে জমা পড়ে উইকেটকিপার পান্তের গ্লাভসে। বাংলাদেশের ইনিংসে ৮ উইকেটের পতন। খানিক পরে তাইজুলও ফিরে যান সেই বুমরাহর বলে। এবারের আউট এলবিডব্লিউ। শেষ উইকেটে খালেদ আহমেদের সঙ্গে অনেকটা সংগ্রাম চালিয়ে যান মুশফিকুর রহিম। তবে লাভের লাভ খুব একটা হয়নি। দলীয় ১৪৬ রানে বুমরাহর ইনসুইং ডেলিভারিতে বোল্ড হলেন মুশফিক। বাংলাদেশের লিড তখন মোটে ৯৪।
ব্যাট করতে নেমে সেই আগ্রাসী সূচনাই করে ভারত। রানতাড়ায় প্রথম ২ ওভারে ১৮ রান দেওয়ার পর তৃতীয় ওভারে উইকেট পেয়েছে বাংলাদেশ। মিরাজকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ওভারের প্রথম বলে লং লেগে হাসান মাহমুদকে ক্যাচ দিয়েছেন রোহিত। নতুন ক্রিজে শুভমান গিলকে এলবিডব্লু করে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় উইকেট এনে দিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
বিরাট কোহলিকে নিয়ে এরপরের কাজটা সহজেই শেষ করেছেন যশস্বী জয়সওয়াল। পেয়েছেন ফিফটি। দলকে নিয়ে গেছেন জয়ের বন্দরে। অবশ্য ম্যাচ শেষ করা হয়নি তার। জয় থেকে তিন রান দূরে থাকতেই বিগ শট খেলতে গিয়ে হয়েছেন আউট। ঋষভ পান্ত শেষ পর্যন্ত নিলেন উইনিং রান। ব্যাটিং-বোলিং আর মাঠের বাইরের প্ল্যানিং– সবখানেই দাপট দেখিয়ে ভারত টেস্ট জিতল ৮ উইকেটের ব্যবধানে। সঙ্গে ম্যান ইন ব্লুদের বিপক্ষে বাংলাদেশেরও টেস্ট ফরম্যাটে জয়ের অপেক্ষা বাড়ল আরও কিছুদিনের জন্য।