গত দশ ম্যাচ ধরে জয় বঞ্চিত ছিলেন টাইগাররা। টেস্ট, ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি তিন সংস্করণেই ব্যর্থতার গল্প লিখে যাচ্ছিল ক্রিকেটাররা। সন্দেহ নেই এ নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে ছিলেন লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। প্রথম ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কাকে ৩৩ রানে হারিয়ে সেই দুঃস্বপ্নটা ছেড়ে ফেলল তামিম ইকবালরা। অস্বস্তির খোলস ভেঙে বেরিয়ে দেশের দামাল ছেলেরা ভাসল জয়ের রঙিন উচ্ছ্বাসে। দুরন্ত এ জয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল টাইগাররা।
শুরুতে ব্যাট হাতে দাপট দেখান তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৬ উইকেটের বিনিময়ে দলকে উপহার দেন ২৫৭ রানে লড়াকু পুঁজি। পরে বোলাররা সারেন বাকি কাজটা। বল হাতে স্পিন বিষ ছড়িয়ে দিনটি নিজের করে নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। একাই শিকার করেন চার উইকেট। সফরকারী শ্রীলঙ্কাকে ধসিয়ে দিতে তার দুরন্ত স্পিন বোলিং পারফরম্যান্সই ছিল যথেষ্ট। সঙ্গে পেস বোলিংয়ে তোপ দাগান মুস্তাফিজুর রহমান নেন তিন উইকেট। তাতেই জয়টা ধরা দিল বহু দিন পর।
তবে বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে স্বাগতিক শিবিরে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। সপ্তম উইকেটে দাসুন শানাকার সঙ্গে ৪৭ রানের পার্টনারশিপ গড়ে ব্যাট হাতে নিজের ভয়ানক রূপ দেখাতে থাকেন হাসারাঙ্গা। পরে অষ্টম উইকেটে ইসুরু উদানার সঙ্গে ৬২ রানের জুটি গড়ে ম্যাচ প্রায় বেরই করে ফেলেছিলেন লঙ্কান এ তারকার অলরাউন্ডার। তাকে সেঞ্চুরি বঞ্চিত করে বাংলাদেশের জয়ে দারুণ ভূমিকা রাখেন তরুণ পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। হাসারাঙ্গা ক্রিজে টিকে থাকলে ভিন্ন কিছুই হতে পারত। তবে সে শঙ্কা আর বাধা উতড়ে গেছে টাইগাররা।
৬০ বল খরচায় ৩ বাউন্ডারি ও ৫ ছক্কায় ৭৪ রানের চমৎকার এক ইনিংস খেলে সাইফউদ্দিনের বলে আফিফের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন হাসারাঙ্গা। লঙ্কানদের হয়ে এটাই ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস। হাসারাঙ্গার দুরন্ত ফিফটিতে ৪৮.১ ওভারে ২২৪ রানে গুটিয়ে যায় লঙ্কানরা। ক্যাপ্টেন কুশল পেরেরা দলীয় স্কোরে যোগ করেন ৩০ রান।
তার আগে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪০তম হাফ-সেঞ্চুরিকে শতকে রূপ দিতে পারেননি ম্যাচসেরা মুশফিক। ৮৭ বলে ৪ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় ৮৪ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলে বিদায় নেন তিনি। তিন অঙ্কের জাদকুরী অঙ্ক থেকে তাকে বঞ্চিত করেন লক্ষ্মণ সান্দাকান। তার বলে মুশফিকের ক্যাচ তুলে নেন ইসুরু উদানা। তবে ফেরার আগে মুশফিক পঞ্চম উইকেটে ১০৯ রানের পার্টনারশিপ গড়েন মাহমুদউল্লাহ‘র সঙ্গে।
মুশফিক বিদায় নিলেও দাপুটে ব্যাটিংয়ে তার সঙ্গী মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ফিফটি হাঁকান। এটি তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৪তম ফিফটি। ৭৬ বলে ২ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় দলীয় স্কোরে ৫৪ রান যোগ করে ফিরেন অলরাউন্ডার রিয়াদ। ২৭* রানে অপরাজিত থেকে যান ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামা তরুণ অলরাউন্ডার আফিফ হোসেন।
দুর্বার ব্যাটিংয়ে চমৎকার এক ফিফটি হাঁকানোর পর ব্যাট হাতে উইকেটে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তামিম ইকবাল। ৭০ বল খরচায় ৬ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় ৫২ রান সংগ্রহ করে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে পা দিয়ে ফেরেন এ তারকা ওপেনার। রিভিউ নিয়েও লাভ হয়নি। তবে ক্রিকেটের তিন সংস্করণ মিলিয়ে ১৪ হাজার রান সংগ্রহের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন তামিম। একদিনের ক্রিকেটে এটি তার ৫১তম হাফ-সেঞ্চুরি।
পরের বলে মিঠুনকে শূন্য রানে আউট করে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়ে ছিলেন ধনাঞ্জয়া। ২৩তম ওভারের শেষ দুই বলে উইকেট দুটি নেন ধনাঞ্জয়া। কিন্তু মুশফিকের দৃঢ়তায় সেটা আর সম্ভব হয়নি। ধনাঞ্জয়ার পরের ওভারের প্রথম বলে এক রান নেন মুশফিক। তবে তিনটি উইকেট পান ধনাঞ্জয়া।
পছন্দের তিন নম্বর ব্যাটিং পজিশনে ব্যাট হাতে নেমেও বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান আলো ছড়াতে পারেননি। প্রিয় দলকে উপহার দিতে পারেননি বড় ইনিংস। দানুশকা গুনাথিলাকার বলে পাথুম নিসানকার হাতে ক্যাচ দিয়ে মাঠ থেকে বিদায় নেওয়ার আগে সাকিব দলীয় স্কোরে যোগ করেন মাত্র ১৫ রান। তবে বল হাতে এক উইকেট নিয়ে স্বীকৃত ক্রিকেটে ১০০০ উইকেট শিকারের মাইলফলক ছুঁয়েছেন এ ক্রিকেট মহাতারকা।
শ্রীলঙ্কাকে ধরাশায়ী করে ১০ পয়েন্ট পেল বাংলাদেশ। আইসিসি বিশ্বকাপ সুপার লিগে চার নম্বরে উঠে গেল বাংলাদেশ। সাত ম্যাচে চার জয়ে টাইগারদের সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে এখন ৪০ পয়েন্ট। শীর্ষ তিনে থাকা ইংল্যান্ড, পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহও লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের সমান। তবে নেট রান রেটে এগিয়ে তারা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২৫৭/৬, ৫০ ওভার (মুশফিক ৮৪, তামিম ৫২, মাহমুদউল্লাহ ৫৪, আফিফ ২৭*, সাকিব ১৫ ও সাইফউদ্দিন ১৩*; ধনাঞ্জয়া ৩/৪৫)।
শ্রীলঙ্কা: ২২৪/১০, ৪৮.১ ওভার (হাসারাঙ্গা ৭৪, পেরেরা ৩০, মেন্ডিস ২৪, গুনাথিলাকা ২১, উদানা ২১ ও শানাকা ১৪; মিরাজ ৪/৩০, মুস্তাফিজ ৩/৩৪, সাইফউদ্দিন ২/৪৯ ও সাকিব ১/৪৪)।
ফল: বাংলাদেশ ৩৩ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: মুশফিকুর রহিম।
সিরিজ ফল: তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশ ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে।