ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার ইতোমধ্যে কেটে গেছে দেড় মাস। বৈধভাবে দেশটিতে অবস্থানের মেয়াদ (৪৫ দিন) শেষ হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) থেকে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ভারতে কী হিসেবে অবস্থান করছেন সে সম্পর্কে এখনো দেশটির পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি।
শেখ হাসিনা কীভাবে ভারতে অবস্থান করছেন তা নিয়ে জনমনে উঠেছে নানা প্রশ্ন। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, দালাইলামার মতো শেখ হাসিনাকেও উদ্বাস্তু হিসেবে আশ্রয় দিতে পারে নয়া দিল্লি।
গত মঙ্গলবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছিলেন, কূটনৈতিক পাসপোর্টের বদৌলতে ভারতে থাকার মেয়াদ শেষ হলেও শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়ার সম্ভাবনা নেই। বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরের জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ জানালে নয়া দিল্লির আইনি উপায় কী হবে, এ নিয়ে ভারতীয় ইংরেজি দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমসে দীর্ঘ এক নিবন্ধ লিখেছেন ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির জিন্দাল গ্লোবাল ল স্কুলের অধ্যাপক প্রভাষ রঞ্জন।
গত ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানান, আদালত বললে শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, ভারত সরকারের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে।
গত ৫ সেপ্টেম্বর দ্য হিন্দু তাদের প্রতিবেদনে জানায়, ভারতীয় বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘বাংলাদেশ ফেরত না চাওয়া পর্যন্ত ভারতে অবস্থানকালে সাবেক ওই প্রধানমন্ত্রীর চুপ থাকা উচিত।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘ভারতে শেখ হাসিনার অবস্থানে কেউ স্বস্তিতে নেই। কেননা, বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে আমরা তাঁকে দেশে ফেরত আনতে চাই। তিনি ভারতে থাকছেন এবং একই সময় কথা বলছেন; যা সমস্যা তৈরি করছে। তিনি যদি চুপ থাকতেন, তাহলে আমরা (বিষয়টি) ভুলে যেতাম; লোকজনও ভুলে যেতেন; কারণ তিনি নিজের জগতে থাকতেন। কিন্তু ভারতে বসে তিনি কথাবার্তা বলছেন ও নানা নির্দেশনা দিচ্ছেন। কেউ এটা পছন্দ করছেন না।’
এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এনডিটিভিকে বলেন, দেশটিতে কী ঘটেছে তা তাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশ আমাদের প্রতিবেশী। আমাদের দিক দিয়ে আমরা আগের মতোই সম্পর্ক রেখে চলতে চাই। দুই দেশের মধ্যে ভালো বাণিজ্য আছে…জনগণের মধ্যে সুসম্পর্ক আছে…আমি এভাবেই সম্পর্ক রাখতে চাই।
এদিন শেখ হাসিনার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি জয়শঙ্কর। আবার ভারত ছাড়া কোনো দেশে যাবেন তিনি তাও জানা যায়নি। তবে, যুক্তরাজ্য তাকে নিতে রাজি হয়নি।
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান নিয়ে মন্তব্য করেছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ফার্স্টপোস্টকে আজ শুক্রবার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, অনেক নেতা দেশ ছেড়ে বিদেশে চলে যান। শেখ হাসিনার ক্ষেত্রেও যদি তিনি দেশের বাইরে থাকেন, তবে তাকে বাইরে থাকতে দিন। আমরা সবাই চাই বাংলাদেশ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুক।
এদিকে, ব্রিটিশ গণমাধ্যম ফিনান্সিয়াল টাইমস বিভিন্ন বিশ্বাসযোগ্য সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, ভারতে মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সাথেই আছেন শেখ হাসিনা। সেখানে তাকে অভিজাত পার্কে ঘুরতেও দেখা গেছে।
তীব্র গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হন সাবেক স্বৈরাচার সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তিনি পালিয়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন। সেখানে তিনি কূটনৈতিক পাসপোর্টের জোরে অবস্থান নিয়েছেন। তবে তার ওই পাসপোর্ট ইতোমধ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাতিল করেছে। তবু ভারতের সম্মতিতে তিনি সেখানেই থাকছেন। ওই কূটনৈতিক পাসপোর্টের বদৌলতে তিনি সর্বোচ্চ ৪৫ দিন বৈধভাবে ভারতে থাকতে পারবেন। এই মেয়াদ গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে।