গত আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে চলতে থাকা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৭০ হাজারেরও বেশি সেনা হারিয়েছে রুশ বাহিনী। বিবিসি এবং রুশ সংবাদমাধ্যম মিডিয়াজোনা শুক্রবার এক প্রতিবেদনে নিশ্চিত করেছে এ তথ্য।
রুশ সংবাদমাধ্যমগুলোতে নিয়মিত যুদ্ধের হালনাগাদ তথ্য এবং নিহত-আহত সেনাদের সংখ্যা, নাম ও পরিচয় প্রকাশ করা হয়। এছাড়া রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এর সংঙ্গে সংশ্লিষ্ট দপ্তরও হতাহতের সংখ্যা প্রকাশ করে। যেসব গোরস্তানে সেনা সদস্যদের কবর দেওয়া হয়, সেখানেও নিহত রুশ সেনাদের নাম পরিচয় রয়েছে।
তথ্য সংগ্রহের জন্য এই তিনটি উৎসকেই ব্যবহার করেছে বিবিসি এবং মিডিয়াজোনা। এবং সংগৃহীত তথ্য যাচাই করতে নিহত সেনাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, “আমাদের হিসেব অনুযায়ী, যুদ্ধে নিহত রুশ সেনাদের সংখ্যা ৭০ হাজার ১১২ জন। অর্থাৎ, এই সেনাদের নাম, পরিচয় এবং মৃত্যু সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি; তবে এটাও ঠিক যে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা আমাদের হিসেবের চেয়ে অনেক বেশি। কারণ অনেক নিহত সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যদের পরিবারের সদস্যরা সংবাদমাধ্যমকে তথ্য জানাতে অপারগতা জানিয়েছেন। এছাড়া পূর্ব ইউক্রেনের দনেৎস্ক এবং লুহানস্কে রুশ বাহিনীর পক্ষে যারা লড়াই করছে, তাদের হতাহতের তথ্যও আমরা পাইনি।”
বিবিসি ও মিডিয়াজোনা যে ৭০ হাজার ১১২ জন নিহত রুশ সেনার নাম-পরিচয় সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে, তাদের মধ্যে ১৩ হাজার ৭৮১ জন স্বেচ্ছাসেবী যোদ্ধা। একসময় তারা বেসামরিক ছিলেন, তারপর রাষ্ট্রের আহ্বানে রুশ বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন। শতকরা হিসেবে, গত আড়াই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে এ পর্যন্ত নিহত রুশ সেনাদের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবী যোদ্ধাদের হার ১৩ শতাংশ।
স্বেচ্ছাসেবী যোদ্ধাদের বেশিরভাগই রাশিয়ার অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা বিভিন্ন শহর ও গ্রাম থেকে আসা। এসব এলাকায় সন্তোষজনক বেতনে কাজ পাওয়া কঠিন। তাই জীবন-জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়ে সেনা বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন তারা। এই স্বেচ্ছাসেবীদের প্রায় সবাই নিজের ইচ্ছায় বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন।
অবশ্য এর কারণও রয়েছে। এর আগে রুশ বাহিনীতে সেনাদের বেতন যা ছিল, বর্তমানে তা ৫ থেকে ৭ গুণ বেশি। এছাড়া সেনাদের শিশু সন্তানদের বিনামূল্যে চিকিৎসা, কর অব্যাহতিসহ বিভিন্ন সামাজিক সুবিধা দিচ্ছে রুশ সরকার। এছাড়া নিয়মিত বেতন-ভাতার পাশাপাশি কোনো স্বেচ্ছাসেবী বাহিনীতে যোগ দেওয়া মাত্র তাকে এককালীন হিসেবে মোটা অঙ্কের অর্থ প্রদান করছে রুশ সরকার। আর্থিক অনটনে থাকা স্বেচ্ছাসেবীদের কাছে এসব সুবিধা বেশ আকর্ষনীয়।
এই স্বেচ্ছাসেবী যোদ্ধাদের অধিকাংশের বয়স ৪২ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। অনেকে অবশ্য তার চেয়েও বেশি বয়সী। বিবিসির তালিকায় সবচেয়ে বেশি বয়স্ক যে স্বেচ্ছাসেবী যোদ্ধার নাম পাওয়া গেছে, তার বয়স ৭১ বছর। এছাড়া অন্তত ২৫০ জন নিহত স্বেচ্ছাসেবীর নাম-পরিচয় উল্লেখ রয়েছে বিবিসি-মিডিয়াজোনার তালিকায়, যাদের বয়স ৬০ বছর বা তার বেশি।
রাশিয়ার নাগরিক ছাড়া অন্যান্য দেশের স্বেচ্ছাসেবীরাও আছেন রুশ বাহিনীতে। এই স্বেচ্ছাসেবীদের অধিকাংশই উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, কিরগিজিস্তানসহ মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা।
তবে উচ্চ বেতন-ভাতা ও আর্থিক সুবিধা দেওয়া হলেও অস্ত্র-শস্ত্রের বাইরে সেনাদের যে সাজ-পোষাক দেওয়া হয় বাহিনী থেকে, সেগুলোর মান বেশ নিম্ন বলে অভিযোগ উঠেছে। বাহিনীর কয়েকজন সেনার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জেনেছে বিবিসি এবং মিডিয়াজোনা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক স্বেচ্ছাসেবী যোদ্ধা বলেন, “সরকার থেকে যে ইউনিফর্ম, হেলমেট, বুলেটপ্রুফ ভেস্ট দেওয়া হয়, সেগুলো সস্তা এবং মানও বেশ নিম্ন। এখানকার ভয়ঙ্কর শীতের জন্য এই পোশাক উপযুক্ত নয়। অবশ্য ভালো মানের ইউনিফর্ম-ভেস্ট-হেলমেটও রয়েছে। তবে সেসব আপনাকে নিজের পয়সায় কিনতে হবে।”