বর্তমানে রাশিয়ায় একজন মহিলা পিছু শিশু জন্মহার ১.৫। গত কয়েকবছর ধরে রাশিয়ায় জন্মনিয়ন্ত্রণ করা শুরু হয়েছে। কিন্তু এবার সেটা বাড়াতে হবে। একজন মহিলা পিছু সেই হার ২.১ হওয়া দরকার— এমনটাই পরামর্শ দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অভিমত। এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে তিনি তার অভিনব অভিমতও জানান। তার মতে, ‘রাশিয়ানদের কাজের বিরতির সময় যৌনমিলনে উৎসাহিত করতে হবে।’
এমনটা শুনে তাজ্জব বনে গেলেও দেশবাসীকে সত্যিই সঙ্গম নিয়ে এমন বার্তা দিয়েছে রাশিয়ার সরকার। কিন্তু কেন তিনি এমন কথা বলেছেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে কৌতূহল।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাশিয়ার জন্মহার এমন ভাবে কমছে যে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন রুশ সরকার। আর সেই সমস্যা মোকাবিলার জন্যই দেশের জনসাধারণকে কাজের ফাঁকেই সঙ্গমের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।
সংবাদমাধ্যম মেট্রোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাশিয়ার শিশুদের জন্মের হার বর্তমানে মহিলা পিছু ১.৫। অন্য দিকে স্থিতিশীল জনসংখ্যা বজায় রাখার জন্য সে দেশে প্রয়োজনীয় জন্মহার মহিলা পিছু ২.১। সেই কথা মাথায় রেখে কর্মক্ষেত্রেও কাজের ফাঁকে সঙ্গম করার আর্জি জানিয়েছে সরকার।
তবে পুতিনের সঙ্গম সংক্রান্ত পরামর্শ দেওয়ার নেপথ্যে কেবল ওই একটিই কারণ নেই। সরকারি রিপোর্ট বলছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে প্রায় ১০ লাখ রুশ তরুণ-তরুণী দেশ ছেড়েছেন। এই নিয়েও চিন্তা বেড়েছে ক্রেমলিনের। আর সেই কারণেও নাকি পুতিনের সরকার কর্মক্ষেত্রে মধ্যহ্নভোজ এবং কফি বিরতির সময়ে সঙ্গমের আর্জি জানিয়েছেন দেশবাসীকে।
রাশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েভজেনি শেস্তোপলোভ সম্প্রতি সাংবাদিকদের সেঙ্গ বৈঠকে রাশিয়ার চাকরিজীবীদের বেশি বেশি করে সঙ্গম করার এবং সন্তান জন্ম দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
শেস্তোপলোভের দাবি, সন্তানধারণ এড়িয়ে যাওয়ার জন্য কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত ব্যস্ততার অজুহাত দেওয়া যেতে পারে না। মানুষের উচিত কর্মক্ষেত্রে বিরতির সময় কাজে লাগিয়ে সঙ্গম করা।
কিন্তু কীভাবে ১২-১৩ ঘণ্টা ধরে কাজ করা একজন কর্মী সন্তান নেওয়ার কথা চিন্তা করবেন? এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে রাশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘জীবন খুব দ্রুত ফুরিয়ে যায়। কাজে ব্যস্ত থাকার অজুহাত খুব একটা যুক্তিগ্রাহ্য নয়। কাঁজের ফাঁকে সঙ্গমের জন্য সময় বের করাই যায়।’’
উল্লেখ্য, এর আগে খোদ পুতিনও জন্মহার কমে যাওয়াকে জাতীয় স্তরে গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত বলে মন্তব্য করেছিলেন।
জনসংখ্যা হ্রাসের উদ্বেগ কমাতে দেশের জনগণকে কর্মক্ষেত্রে সঙ্গমের পরামর্শ দেওয়া ছাড়া আরও ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে রাশিয়া। বিনামূল্যে নারীদের প্রজননক্ষমতা পরীক্ষা ব্যবস্থা করেও দেশের নাগরিকদের উৎসাহিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে পুতিন সরকার।
পাশাপাশি, সন্তানধারণে কর্মীদের অনুপ্রাণিত করার জন্য কর্তৃপক্ষও যেন ভূমিকা পালন করেন, তা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
একটি প্রতিবেদন অনুসারে, রাশিয়ার চেলিয়াবিনস্ক অঞ্চলে ২৪ বছরের কম বয়সে প্রথম সন্তানের জন্ম দেওয়া নারীদের ৮ হাজার ৫০০ পাউন্ড করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। পাশাপাশি গর্ভপাতও নিষিদ্ধ করেছে রুশ সরকার।