দেশের খোলাবাজারে বা কার্ব মার্কেটে নগদ ডলারের দাম কমছে। এক মাসে আগে যেখানে এক মার্কিন ডলার কিনতে খরচ হতো ১২৩ থেকে ১২৪ টাকা, এখন সেখানে লাগছে ১২১ থেকে ১২২ টাকা। ব্যাংকে নগদ ডলার বিক্রি হচ্ছে আরও কমে ১২০ টাকায়।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন, বায়তুল মোকাররম, গুলশান ও বনানীর এলাকায় খোলাবাজারে ডলার ব্যবসায়ী ও মানি এক্সচেঞ্জের কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত একমাস ধরে ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রলিং পেগ পদ্ধতি ও নতুন গভর্নর যোগ দেওয়ার পর মিডরেট থেকে ব্যান্ড রেট আড়াই শতাংশে উন্নীত করায় অস্থিরতা কেটেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা জানান, সংকট কাটতে শুরু করায় ব্যাংকগুলো এখন নিজেরাই ডলার কেনা-বেচা করতে পারছে। ব্যাংকগুলোতে ডলারের দাম বর্তমানে ১১৮-১২০ টাকার মধ্যে রয়েছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে ও কার্ব মার্কেটে ডলারের দামের পার্থক্য এখন ১ শতাংশেরও কম। ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। আন্তঃব্যাংক লেনদেন সক্রিয় থাকার কারণে বৈদেশিক মুদ্রার বাজার এখন থেকে স্থিতিশীল থাকবে বলে আশা করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ কর্মকর্তা।
গত ৫ আগস্ট দেশটিতে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিদেশ ভ্রমণের চাহিদা কমে যাওয়া ও খোলাবাজারে ডলারের প্রবাহ বেড়েছে। যার কারণে ডলারের বিনিময় হার নিম্নমুখী রয়েছে। সাধারণত ভ্রমণকারীরা খোলা বাজার থেকে বৈদেশিক মুদ্রা কিনে থাকেন। তাদের চাহিদা কমে যাওয়ায় ডলারের দামও কমতির দিকে।
অফিসিয়াল কাজে যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন এন এম আহমেদ। আগামী শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) ফ্লাইট। বৃহস্পতিবার বিকেলে জরুরি ডলার কিনবেন। মতিঝিল একটি মনি চেঞ্জারে তিনি খুচরা ডলার কিনেছেন, রেট ১২২ টাকা নিয়েছে। এখন এখন আগের চেয়ে কমেছে জানিয়ে এ ডলার ক্রেতা বলেন, গত মাসে খুচরা ডলারের দাম ছিল ১২৪ টাকা, আজকে ১২২ টাকা নিয়েছে।
চলতি বছরের ৮ মে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্তের কারণে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম ৭ টাকা বৃদ্ধি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক লাফে ডলারের দাম ১১০ টাকা থেকে ১১৭ টাকা হয়। এদিকে ১৪ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে আহসান এইচ মনসুর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে বৈদেশিক মুদ্রা বা ডলার–সংকট কাটাতে আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যান্ড ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাতে ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণের ক্রলিং পেগ ব্যবস্থায় ডলারের মধ্যবর্তী দাম ১১৭ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা পর্যন্ত বাড়াতে পারবে ব্যাংকগুলো। নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকরেটের চেয়ে একটাকা বেশি দরে ডলার বিক্রি করতে পারে মানি চেঞ্জারগুলো।
মানি চেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশর সভাপতি এস এম জামান জানান, এখন ১২০ টাকার মধ্যে কিনে ১২১ থেকে সর্বোচ্চ ১২১.৫০ টাকায় বিক্রি করছি। এখন দেশে প্রচুর পরিমাণ রেমিট্যান্স আসছে। তাই ব্যাংকে ডলারের সরবরাহ ভালো।
ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে টানা প্রায় ১৬ বছরের আওয়ামী লীগের নজিরবিহীন দুঃশাসন ও স্বেচ্ছাচারিতার অবসান ঘটে। হাসিনা সরকারের আমলে বেপরোয়া অর্থপাচারের ফলে ডলার সংকটে পড়ে ব্যাংক খাত। সেই সংকট এখনও চলমান। গত দুই বছর ধরে রিজার্ভ থেকে ডলার সহায়তা দিয়েও ডলার সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব হয়নি। উল্টো দুই বছরেরও কম সময়ে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়েছে ৩৭ শতাংশ। সেই অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে খোলাবাজারে ১২৮ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল প্রতি ডলারের দাম।