ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর কর্মস্থলে অনুপস্থিত পুলিশ সদস্যদের আর যোগদান করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকায় অনেক পুলিশ সদস্য কর্মস্থলে যোগ দিচ্ছে না। যারা এখনও কর্মস্থলে যোগ দেননি, তাদের আর যোগদান করতে দেওয়া হবে না। পুলিশের যেসব সদস্য অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তাদের কিছুতেই মাফ করা হবে না।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪০তম বিসিএস (আনসার) ক্যাডার কর্মকর্তা ও ২৫তম ব্যাচ (পুরুষ) রিক্রুট সিপাহিদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি আনসার ভিডিপি একাডেমিতে সমাপনী অনুষ্ঠানে খোলা জিপে চড়ে প্যারেড গ্রাউন্ড পরিদর্শন করেন।
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ছয়জন বিসিএস কর্মকর্তা ও ৯০৮ জন রিক্রুট সিপাহী সমাপনী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে তাদের জন্য নির্ধারিত মৌলিক প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করেন। বিসিএস কর্মকর্তারা দীর্ঘ ১২ মাস মৌলিক প্রশিক্ষণ নেন। একইসঙ্গে মাস্টার্স অব হিউম্যান সিকিউরিটি (এমএইচএস) কোর্স সম্পন্ন করেছেন। অপরদিকে রিক্রুট সিপাহিরা ৬ ছয় মাসের মৌলিক প্রশিক্ষণ নেন।
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তার পদত্যাগের পর অনেক পুলিশ সদস্য আত্মগোপনে চলে যান। আবার উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে বেশিরভাগ পুলিশ সদস্য কাজে যোগ দেননি। পরে নোটিশ দিয়ে তাদের কর্মে ফেরায় পুলিশ সদর দফতর। কিন্তু এমন নোটিশ পেয়ে বেশিরভাগ কাজে যোগ দিলেও এখনো ১৮৭ জন সদস্য কর্মস্থলে এখনও অনুপস্থিত রয়েছেন বলে গতকাল পুলিশ সদর দফতর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
রাতে পুলিশ সদর দফতরের মিডিয়া বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পটপরিবর্তনের পর গত ১ আগস্ট থেকে মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত ১৮৭ জন কর্মস্থলে যোগাযোগ না করে অনুপস্থিত রয়েছেন।
সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা জনগণের সুবিধার জন্য দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরে মাঠে আছে। তাদের একটা ক্ষমতার ভেতর কাজ করতে হবে। আমাদের অন্য বাহিনীতে কিছু স্বল্পতা রয়ে গেছে।
আনসার বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্যে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকার পতনের পর আজ বাংলাদেশ নবজাগরণে উজ্জীবিত। বিগত সরকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের হতে পারেনি বলেই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরাচার সরকার দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। এই গণঅভ্যুত্থানে আত্মাহুতি দিয়েছেন আবু সাঈদ, মীর মুগ্ধ, ইয়ামিন ও ফাইয়াজদের মতো হাজারো ছাত্র-জনতা। আপনাদের কাছে আমার চাওয়া, দেশ ও জনগণের কল্যাণে আপনারা নিজেদের সপে দিয়ে সততা, নিষ্ঠা ও ন্যায্যতার মাপকাঠিতে কাজ করবেন। আপনাদের সকলের সহযোগিতায় বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।
আনসার বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর থানা, ট্রাফিক, বিমানবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর সুরক্ষায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশেষ করে আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা ডিএমপির থানাগুলোর অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে এবং হযরত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে।
আনসার বাহিনীকে ধন্যবাদ দিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ বাহিনীর স্বল্পতার মাঝেও রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনাতে আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। জাতির জরুরি প্রয়োজনে সাহসী ভূমিকা রাখার জন্য বাহিনীটির সব সদস্যের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ, বাহিনীর অতিরিক্ত মহাপরিচালক, আনসার ও ভিডিপি একাডেমির ভারপ্রাপ্ত কমান্ড্যান্ট, উপ মহাপরিচালকবৃন্দ, বাহিনীর পরিচালকরাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।