বাংলাদেশি নাগরিকদের পরিকল্পিত হত্যা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। ভারতীয় সীমান্তরক্ষা বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা সাম্প্রতিক দিনগুলোতে নতুন মাত্রা পেয়েছে। বছর কয়েক আগে ফেলানি খাতুনের হত্যাকাণ্ড আন্তর্জাতিক স্তরে নিন্দার ঝড় তুলেছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও, সীমান্তে হত্যার ঘটনা থামেনি।
সম্প্রতি ১৫ বছর বয়সী কিশোর জয়ন্ত কুমার সিংহ নিহত হয়েছেন। এছাড়া কিশোরী স্বর্ণা দাস ও আবদুল্লাহও বিএসএফের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানিয়েছে— ২০২৩ সালে বিএসএফ সীমান্তে গুলি করে ৩১ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে। এর আগে ২০২১ সালে ১৮ জন এবং ২০২২ সালে ২৩ জনকে হত্যা করা হয়েছিল। ২০০৯ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বিএসএফের হাতে অন্তত ৫২২ জন বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন। এমনকি করোনা মহামারির সময়ও এই হত্যাকাণ্ড বন্ধ হয়নি।
ভারতীয় দণ্ডবিধি বা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী চোরাচালানকারীদের গুলি করে হত্যা করার অনুমতি নেই। বরং সীমান্ত পেরোনো ব্যক্তিদের গ্রেফতার এবং বিচারের মুখোমুখি করার কথা বলা হয়েছে। তবুও ভারত নিয়মিতভাবে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ আইন ও দ্বিপাক্ষিক চুক্তি উপেক্ষা করছে। ১৯৭৫ সালের ভারত-বাংলাদেশ যৌথ সীমান্ত কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা এবং ২০১১ সালের সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা অনুসারে বিএসএফকে আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার পরিহার করতে বলা হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন বলছে— বিএসএফের হাতে নিহত অধিকাংশ ব্যক্তি নিরস্ত্র বা সামান্য অস্ত্রধারী ছিলেন। অনেকেই পালানোর সময় পেছনে গুলি খেয়েছেন। কোনো তদন্তেও প্রাণঘাতী অস্ত্র উদ্ধার হয়নি যা আত্মরক্ষার প্রয়াস হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এই ধরনের সহিংসতা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং একটি ধারাবাহিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের উদাহরণ। সীমান্তে এসব হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের মর্যাদা এবং অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।
এদিকে ভারতের এমন সহিংস কর্মকাণ্ড মোকাবিলা এবং দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। বিশেষ করে— জাতিসংঘ, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ও মানবাধিকার পরিষদের মতো সংস্থাগুলোকে এসব হত্যাকাণ্ডে নিন্দা এবং কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়তার অনুরোধ জানিয়েছে সংগঠনগুলো।
এছাড়া তারা বলছে, এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে নীরবতা ভাঙার সময় এসেছে। বাংলাদেশের সীমান্তে এই রক্তপাত বিশ্ব উপেক্ষা করতে পারে না। একত্রে কাজ করে নিরপরাধদের কান্না অশ্রুতে পরিণত করা যাবে না।