কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বর্তমান চেয়ারম্যান ও সাবেক চেয়ারম্যানের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আরও ৩৫ জন আহত হয়েছেন।
নিহত মো. ইকবাল মিয়া (৩৪) ওই গ্রামের খালপাড় এলাকার ধন মিয়ার ছেলে। তিনি পেশায় কৃষক ছিলেন। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টায় বুকে টেঁটা বিদ্ধ অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন ডাক্তার।
স্থানীয়রা জানান, এই দুই বংশের মধ্যে ৫৬ বছর ধরে দ্বন্দ্ব চলছে। বংশ দুটি হলো উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপি গ্রামের বর্তমান চেয়ারম্যানের সরকারবাড়ি ও সাবেক চেয়ারম্যানের কর্তাবাড়ি। সরকারবাড়ির পক্ষে নেতৃত্ব দেন ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের নেতা সরকার শেফায়াত উল্লাহ। আরেক পক্ষ কর্তাবাড়ির নেতৃত্ব দেন সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপির নেতা তোফাজ্জল হোসেন। দুই বংশের দ্বন্দ্বে ইকবাল মিয়াসহ এ পযর্ন্ত ১৪ জন খুন হয়েছেন।
এর আগে, চলতি বছর ১৬ জুন ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দুই বংশের মধ্যে সংঘর্ষে কর্তাবাড়ির নাদিম গুরুতর আহত হলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৯ জুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ৬ আগস্ট ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে সাদেকপুরের মেন্দিপুর পূর্বপাড়া এলাকায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। ৭ আগস্ট একই ঘটনায় সংঘর্ষে টেঁটার আঘাতে জহিরুল্লাহ নামের একজন নিহত হন।
এদিকে নাদিম হত্যা ঘটনায় সরকারবাড়ির চেয়ারম্যান সাফায়েত উল্লাহ, তার ভাই ও দুই ছেলেসহ ৮৩ জনকে আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করে কর্তাবাড়ির পক্ষ। পরে বিচারক সরকারবাড়ির ৬৯ জন কিশোরগঞ্জ কোর্টে হাজিরা দিতে গেলে তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান।
গত ১৩ আগস্ট সরকারবাড়ির লোকজন জামিনে মুক্তি পায়। মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফিরতেই শুরু হয় দফায় দফায় সংঘর্ষ। কিছুদিন ধরে দুই পক্ষে মধ্যে উত্তেজনা চলে। পুলিশ ও সেনাবাহিনী এলাকায় গিয়ে দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেও সমাধান মেলেনি।
হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে সরকারবাড়ির পক্ষে হাজী আনোয়ারুল হক বলেন, পূর্বশত্রুতার জেরে কর্তাবাড়ির লোকজন আমাদের বাড়ির লোকজনের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। কর্তাবাড়ির লোকজনের টেঁটার আঘাতে আমাদের বাড়ির ইকবাল নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ৩৫ জনের মতো। এর মধ্যে ৩০ জন সরকার বাড়ির, আর কর্তা বাড়ির ৫ জনের মতো হতে পারে ।
এ বিষয়ে কর্তাবাড়ি পক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপির নেতা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, বহু বছর আগে থেকেই পূর্বশত্রুতা চলছে। এসবে আমি অতিষ্ঠ হয়ে ভৈরব শহরে বসবাস করছি। আজকে মারামারি হয়েছো শুনেছি। তবে হত্যার বিষয়ে কিছুই জানি না। যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি।
ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ফারিয়া নাজনীন বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই ইকবাল মারা যান। মূলত বুকে বল্লমবিদ্ধ হওয়ার কারণে তার মৃত্যু হয়। এছাড়া হোসাইন (২০), ইয়াছিন (২৫), রাকিব (৩২) শাহ আলম (৩০) তোফাজ্জল (৩৫), হেলেনা বেগম (৩৫), শাফি ব্যাপারী (৬৫) ও লাদেন (২০) হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। এদের মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় লাদেন, হেলেনা বেগম, শাহ আলম ও শাফি ব্যাপারীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
ভৈরব থানার (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম জানান, মৌটুপি গ্রামের মানুষ বংশপরায়ণভাবে শত্রুতা, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে যুগ যুগ ধরে ঝগড়া সংঘর্ষ করছে। আজকে দুই বংশের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে। নিহতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।