সরকার দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ করোনা পরিস্থিতির মধ্যে খুললে অনলাইন ও অফলাইন—উভয় মাধ্যমেই পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনার চিন্তা-ভাবনা করচ্ছে। যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হতে চাইবে না, তারা অনলাইনেই ক্লাস করার সুযোগ পাবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে পাল্টে যাবে শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইমেন্ট দেয়ার ধরনও।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, জুন মাস থেকে স্কুল-কলেজ খোলার চূড়ান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে চায় মন্ত্রণালয়। করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ পর্যন্ত কী কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সে বিষয়ে তথ্য চেয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরে (মাউশি) চিঠি দেয়া হয়েছে এবং চিঠির চাহিদা মোতাবেক তথ্য পাঠানো হয়েছে। আগামী ২৯ মে’র আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের টেকনিক্যাল কমিটির সদস্যসহ দফতর-সংস্থার প্রধানদের নিয়ে বৈঠক করা হবে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে কবে থেকে স্কুল-কলেজ খুলে দেয়া যায়, সে বিষয়ে পরামর্শ করে সরকারের ওপর মহলে জানানো হবে। পরে সিদ্ধান্ত এলে সেটি বিবেচনা করে এ বিষয়ে ঘোষণা আসবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে চলতি বছরের এসএসসি এবং এইচএসসি—দুটি বড় পাবলিক পরীক্ষা আটকে আছে। এ দুই পাবলিক পরীক্ষা নিতে আলাদাভাবে দুটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস করা হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তা পড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। অনলাইন, টিভিতে ক্লাস সম্প্রচার করা হলেও তা সবার কাছে পৌঁছে দেয়া যাচ্ছে না বলে দ্রুত সময়ের মধ্যে স্কুল-কলেজ খোলার কথা ভাবা হচ্ছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, স্কুল-কলেজ খুললে অনলাইনে ও সশরীরে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়া হবে। অনেক অভিভাবক করোনার মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও তাদের সন্তানকে পাঠাবেন না বলে নানান মাধ্যমে জানিয়েছে। এ কারণে যারা ক্লাসে সশরীরে উপস্থিত হবে না, তাদের জন্য অনলাইনে নিয়মিত শিক্ষকদের ক্লাস নিতে বলা হবে। স্কুল-কলেজ খুললেও সকল সাময়িক পরীক্ষা বাতিল করা হবে। এর বদলে নিয়মিত অ্যাসাইমেন্ট দেয়া হবে। অ্যাসাইমেন্টের ধরনও তখন বদলে যাবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির বর্তমান নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত থাকলে দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ঘোষণা আসতে পারে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন দফতর ও সংস্থার প্রধানদের নিয়ে বৈঠক করে আমরা একটি প্রস্তাব সরকারের ওপর মহলে পাঠাবো। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত হওয়ার পরে এ বিষয়ে ঘোষণা দেয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চলতি বছরের এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস পড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে। এই সিলেবাস শেষ না করে তাদের পরীক্ষা নেয়া যাচ্ছে না। এ কারণে এই দুই স্তরের পাবলিক পরীক্ষা সম্পন্ন করতে আমাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অন্যান্য স্তরের শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে একদিন করে সশরীরে ক্লাস করানো হবে। তবে কেউ যদি সশরীরে উপস্থিত হতে না চায়, তাদের জন্য অনলাইন ক্লাসও অব্যাহত থাকবে। দুই মাধ্যমেই নিয়মিত ক্লাস নিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে তাই শিক্ষার্থীদের অনেকেই নিয়মিত লেখাপড়া করতে পারছে না। এ কারণে চলতি বছরের সকল সাময়িক ও শ্রেণি পরীক্ষা বাতিল করার কথা ভাবা হচ্ছে।
নতুন অ্যাসাইমেন্টের বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির সদস্য (কারিকুলাম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, ‘বর্তমানে অ্যাসাইনমেন্টের যে রূপরেখা, তার ভিত্তিতে ষষ্ঠ-দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত কাজ দেয়া হবে। শিক্ষার্থীরা প্রতি সপ্তাহে একটি পূর্ণাঙ্গ অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করে শিক্ষকদের কাছে জমা দেবে। এই কাজের মধ্যে কী কী বিষয় যুক্ত করতে হবে, কোন ধাঁচে লিখতে হবে তার বিভাগভিত্তিক (বিজ্ঞান, মানবিক, বাণিজ্য) কাজ দেয়া হবে। শিক্ষকরা সেগুলো মূল্যায়ন করে নম্বর দেবেন। অ্যাসাইনমেন্টগুলোতে কী কী যুক্ত করলে কত নম্বর দেয়া যেতে পারে সে বিষয়ে রূপরেখা তৈরি করে শিক্ষকদের দেয়া হবে, তার ভিত্তিতে মূল্যায়ন হবে।’
এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘বর্তমান কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হবে। মুখস্তবিদ্যার বদলে তারা হাতে-কলমে কতটুকু শিখছে সেটি অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে তৈরি করতে হবে। পাঠদানের সঙ্গে প্রজেক্টভিত্তিক অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করতে সক্ষম, এমন কাজ দেয়া হবে। শিক্ষকরা সেটি নিবিড়ভাবে মূল্যায়ন করে নম্বর দেবেন। আগামী মাসের শেষের দিকে এ সংক্রান্ত খসড়া তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।’