‘৫ আগস্ট সকাল ১১টায় বাসা থেকে বের হয় সজল। আমি সেদিন হাসপাতালে ডিউটিতে ছিলাম। ইমারজেন্সিতে যখন অনবরত গুলিবিদ্ধ রোগী আসছিল, তখন বারবার সজলকে ফোন করে ঘরে ফিরে যেতে বলি। সজল আমাকে বলে, আম্মু, তুমি কি পাগল হয়ে গেছ? অন্য ছেলে-মেয়েদের তোমার নিজের সন্তান মনে হয় না? আমাদের এখানে তিন-চারজন অলরেডি মারা গেছে। তুমি কেন স্বার্থপরের মতো আমাকে বাসায় ডাকো? এক সন্তান মারা গেলে তোমার পাশে হাজার সন্তান দাঁড়াবে।’
ছেলে হারানোর চাপা বেদনা নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন নিহত সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘সর্বশেষ বিকেল পৌনে ৩টার দিকে সজলের সঙ্গে কথা হয়। তখন সজল জানায়, আম্মু এখানকার (আশুলিয়ার বাইপাইল) পরিস্থিতি খুবই খারাপ। আমি যদি শহীদ হই, তাহলে আমার প্যান্টের পকেটে ইউনিভার্সিটির কার্ড আছে, কার্ড দেখে আমার লাশটি চিনে নিয়ে যেয়ো। আল্লাহ ওর সেই কথাটাই কবুল করল।’
আশুলিয়ার সিটি ইউনিভার্সিটির টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং (বিএসসি) প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন সজল। পরিবারের সঙ্গে আশুলিয়ার জামগড়া চৌরাস্তা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। সজলের মা শাহিনা বেগম আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালে কর্মরত আছেন।
শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে শোনার পর সজলকে ফোন দিয়েছিলেন মা শাহিনা বেগম। কিন্তু তখন সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এরপর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। রাতে সজলের মা-বাবা সাভার ও ঢাকার বিভিন্ন মেডিক্যালে খোঁজাখুঁজি করেও ছেলের সন্ধান পাননি। রাত ৩টার দিকে কেউ একজন খবর দেয় আশুলিয়া থানার সামনে সাত-আটজন আন্দোলনকারীর লাশ পুড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ। পরদিন (৬ আগস্ট) সকালে আশুলিয়া থানার সামনে যান সজলের মা-বাবা। সেনাবাহিনীর সদস্যরা তখন সজলের আইডি কার্ড হাতে নিয়ে পরিবারের সদস্যদের খোঁজ করছেন। পরে আইডি কার্ড দেখে তার লাশ শনাক্ত করা হয়। ছেলের পোড়া অঙ্গার দেহ দেখে মা বিলাপ করতে থাকেন।
আশুলিয়া থানার অপর প্রান্তের একটি ভবনের ভাড়াটিয়া আসাদুজ্জামান জানান, ‘দোতলার জানালা দিয়ে স্পষ্ট দেখা গেছে, নিচে একটি ভ্যানে সাত-আটজনের মরদেহ স্তূপ করে রাখা হয়েছে। ভ্যানের চারপাশে ছিল পুলিশ সদস্যরা। এরপর তারা ওই ভ্যানটিতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই মানুষ পোড়া গন্ধে আমরা মুখে গামছা চেপে ধরি। কারো সাহস ছিল না নিচে গিয়ে দেখার।’