ভারতে ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ বা ‘কালো ছত্রাক’ সংক্রমণকে মহামারি ঘোষণার পরপরই চিকিৎসকদের মধ্যে যা চিন্তার ছাপ ফেলেছে ‘হোয়াইট ফাঙ্গাস’। বিহার রাজ্যে ৪ জন হোয়াইট ফাঙ্গাসে সংক্রমিত হয়েছেন বলে আজ বৃহস্পতিবার জানা গেছে। চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চেয়েও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে এই ছত্রাকটি।
চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’র সংক্রমণ শুধু মুখের আশপাশের অঙ্গগুলোতেই হয়। কিন্তু ‘হোয়াইট ফাঙ্গাস’ খুব দ্রুত অন্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। ফুসফুস, যকৃৎ, বৃক্ক, যৌনাঙ্গ— সমস্ত অঙ্গই অত্যন্ত দ্রুত সংক্রমিত হতে পারে হোয়াইট ফাঙ্গাসে। নখের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে এটি। তার পরে অঙ্গগুলোকে বিকলও করে দিতে পারে এই ছত্রাক।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণে মৃত্যুর হার অত্যন্ত বেশি। হোয়াইট ফাঙ্গাসের সংক্রমণে মৃত্যুর হার সম্পর্কে এখনও স্পষ্ট কোনও ধারণা নেই। কিন্তু নানা অঙ্গে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা দেখে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন যে, এই ফাঙ্গাস আরও বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
ইতোমধ্যে যে ৪ জনের শরীরে এই ছত্রাকের সংক্রমণ পাওয়া গিয়েছে, তাদের করোনার যাবতীয় উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষায় সংক্রমণ ধরা পড়েনি। তার পিছনে হোয়াইট ফাঙ্গাসের কোনও ভূমিকা আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিজ্ঞানীদের একাংশের মত, হোয়াইট ফাঙ্গাস গর্ভবতী নারী ও শিশুদের বেশি পরিমাণে আক্রান্ত করতে পারে। তাই অতি দ্রুত এই ছত্রাক সম্পর্কে আরও জানার চেষ্টা করছেন তারা।
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যয়ের মধ্যেই ভারতজুড়ে প্রকোপ শুরু হওয়া মিউকরমাইকোসিস কিংবা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস অর্থাৎ কালো ছত্রাক সংক্রমণকে মহামারি হিসেবে ঘোষণার জন্য দেশের প্রতিটি রাজ্য সরকারে চিঠি পাঠিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চিঠিতে এই রোগটিকে ‘মহামারি আইন’র অধীনে তালিকাভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। এর অর্থ ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কিংবা কালো ছত্রাক রোগ সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানাতে হবে রাজ্যগুলোকে। ঠিক যেমনটা হচ্ছে মহামারি করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে।
ভারতের সব সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত রোগী বা কারও এই ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে এ সম্পর্কিত তথ্য স্বাস্থ্য দফতর ও পরে ইন্টিগ্রেটেড ডিজিজ সার্ভিল্যান্স প্রজেক্ট (আইডিএসপি) নজরদারি ব্যবস্থাকে জানাতে রাজ্যগুলো বাধ্য থাকবে। রাজ্যগুলোকে চিঠিটি পাঠিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব লব আগরওয়াল। সেই চিঠিতে তিনি লিখেছেন যে, ‘মিউকরমাইকোসিসের শনাক্তকরণ, নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত নির্দেশিকা সমস্ত সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজগুলোকে অবশ্যই মেনে চলতে হবে’।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, রোগটির চিকিৎসার জন্য একাধিক বিভাগের মধ্যে চিকিৎসা পদ্ধতির সমন্বয় চোখের সার্জন, নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ, জেনারেল সার্জন, নিউরোসার্জন, ডেন্টাল ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জনদের সঙ্গে অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ অ্যামফোটেরিসিন-বি দিয়ে চিকিৎসা জরুরি। ভারতে করোনা রোগীর কালো ছত্রাকে আক্রান্ত হওয়ার কয়েকটি ঘটনা সামনে এসেছে। কোভিড রোগী ছাড়া অন্যরাও এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ব্ল্যাক ফাঙ্গাস রোগে নাকের উপর কালো ছোপ, দেখতে অসুবিধা হওয়া, বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
মহারাষ্ট্রে ইতোমধ্যে দেড় হাজারের বেশি কালো ছত্রাক সংক্রমিত রোগী চিহ্নিত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৯০ জনের। পশ্চিমবঙ্গেও ৫ জনের শরীরে এর উপস্থিতি মিলেছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা কেন্দ্র সরকারকে এই রোগকে মহামারি ঘোষণার পরামর্শ দেয়। গতকাল রাজস্থান সরকার কালো ছত্রাককে মহামারি ঘোষণা করেছে। গত মঙ্গলবার হরিয়ানা সরকারও মহামারি ঘোষণা করে। কর্ণাটক, উত্তরাখণ্ড, তেলেঙ্গানা, মধ্যপ্রদেশ, অন্ধ্র প্রদেশ, হরিয়ানা ও বিহারসহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে কালো ছত্রাকের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।