পঁচাত্তরের পর সবচেয়ে প্রতিকূল অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে প্রায় ১৬ বছর পর ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যান দলটির সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর জনরোষ থেকে বাঁচতে গা ঢাকা দেন আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতা। এই অবস্থায় অনেকে গ্রেফতার হয়েছেন, আবার কেউ কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেনও।
এবার দেশ ছেড়ে পালাতে গিয়ে দুঃখজনকভাবে মৃত্যু হয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এবং পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইসহাক আলী খান পান্নার। সিলেটের তামাবিল সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতে পালানোর সময় মেঘালয় পাহাড়ে তিনি মারা যান।
সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (২৪ আগস্ট) মধ্যরাতে তিনি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে মেঘালয় রাজ্যে চলে গিয়েছিলেন। শিলংয়ে পাহাড়ে ওঠার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তবে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে তিনি প্রাণ হারিয়েছেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে।
ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পান্নার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে একটি ছবিতে তার মরদেহের এক পাশে রক্তের ছোপ দেখা গেছে। এছাড়া তার পায়ে রক্তের দাগ রয়েছে।
পান্নার মৃত্যু কীভাবে হয়েছে সেটা নিশ্চিত হওয়া না গেলেও তিনি যে মারা গেছেন সেটা নিশ্চিত হওয়া গেছে। অনেকে সামাজিক যোগাযাগমাধ্যমে পোস্ট করে শোক জানাচ্ছেন।
পান্নার গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার বেকুটিয়া গ্রামে। তবে গ্রামের বাড়িতে তার যাতায়াত তেমন ছিল না। তার স্ত্রী আইরীন পারভীন বাঁধন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ৪৫ বছর বয়সে ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল মারা যান। স্ত্রীর মৃত্যুর পর পান্না আর বিয়ে করেননি। তাদের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে, তবে সে পালিত সন্তান বলে জানা গেছে।
ইসহাক আলী খান পান্না ১৯৯৪ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন। ওই সময় ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন সাবেক পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম। পেশাগত ডায়মন্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারমান ছিলেন পান্না। ২০১২ সালে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পর দলের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক এবং পরে বিভিন্ন উপ-কমিটির সদস্য হয়েছিলেন। তিনি পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৯ আগস্ট ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পালিয়ে থাকা অবস্থায় স্ট্রোক করে মারা যান রাজশাহীর আওয়ামী লীগ নেতা সাইদুল ইসলাম বাদল (৬০)। তিনি রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য। এছাড়া হাইকোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক গতকাল শুক্রবার (২৩ আগস্ট) ভারতে পালাতে গিয়ে সিলেট সীমান্তে বিজিবির হাতে আটক হয়েছেন।