সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে, সেই সরকারের মেয়াদ কতদিন থাকবে সে বিষয়ে কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা এবং নতুন নির্বাচনের আকাঙ্ক্ষার মধ্যে সমন্বয় করে যতদিন থাকা দরকার ততদিনই ক্ষমতায় থাকবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
শনিবার (১০ আগস্ট) সকালে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন আসিফ নজরুল।
জুলাইয়ের শুরুতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন শান্তিপূর্ণ থাকলেও মাসটির মাঝামাঝি এসে তা সহিংসতায় রূপ নেয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ-ছাত্রলীগের ব্যাপক সংঘর্ষ হলে বহু মানুষ প্রাণ হারায়। আহত হন কয়েক হাজার। এমন আন্দোলনের মধ্যে আগস্টের শুরুতে তা সরকার পতনের আন্দোলনে পরিণত হয়।
গত ৫ আগস্ট গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগের টানা চতুর্থ মেয়াদের সরকারের পতন হয়। গত বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জন উপদেষ্টা শপথ নেন।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বে যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে, সেই সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে সে বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়। ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ এখনো ঠিক হয়নি।
এছাড়া বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘নবগঠিত সরকারের মেয়াদের বিষয়ে এখন আলোচনা বা সিদ্ধান্ত নেওয়াটা সম্ভব নয়। আপনি কী সংস্কার চান, সেটা না বুঝে তো আমি মেয়াদের কথা বলতে পারব না। সংস্কার যদি আপনারা না চান তাহলে আরেক কথা। কাজেই এখন মেয়াদ মেয়াদ করে অস্থির হওয়ার কিছু নেই।’
তাদের মন্তব্যের পরদিন শনিবার সচিবালয়ে সরকারের মেয়াদ নিয়ে কথা বলেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা এবং নতুন নির্বাচনের আকাঙ্ক্ষার মধ্যে সমন্বয় করে যতদিন থাকা দরকার ততদিনই ক্ষমতায় থাকবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, ‘এটার মেয়াদের ব্যাপারে এখনও কোনো কথা হয়নি। একটা জিনিস মাথায় রাখবেন কাইন্ডলি সেটা হচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যাশা থাকবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন, আবার এ দেশের সাধারণ মানুষের যে সংস্কার আকাঙ্ক্ষা, সেখানে প্রত্যাশা থাকবে এ সরকার যেন জরুরি কিছু সংস্কার করে যায়।’
‘কারণ আমরা অতীতে দেখেছি নির্বাচন কমিশন, পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে এমনকি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কেও জনগণকে নির্যাতনের পথ হিসেবে চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা এই সমস্ত প্রতিষ্ঠান থেকে কিছু-কিছু ভালো সার্ভিস পেয়েছি। এসব প্রতিষ্ঠানে কিছু-কিছু ভালো মানুষ আছেন। কিন্তু পুরো সিস্টেমকে এমনভাবে দাঁড় করিয়েছিল, ভিন্নমত পোষণকারী মানুষ, মৌলিক অধিকার চর্চাকারী মানুষের জন্য এ প্রতিষ্ঠানগুলো একটা আতঙ্কে পরিণত হয়েছিল। এই সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা মানুষের আছে। সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা এবং নতুন নির্বাচনের আকাঙ্ক্ষার মধ্যে সমন্বয় করে যতদিন থাকা দরকার ততদিনই আমরা থাকব। বেশিও না, কমও না।-যোগ করেন তিনি।
আসিফ নজরুল বলেন, ব্যক্তিগতভাবে যদি আমি বলি আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা জীবন মিস করি, আমি আমার উন্মুক্ত ফ্রি জীবন মিস করি। আমার ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেষ কবে আমি আমার সেই জীবনে ফিরে যেতে পারব, যেটা আমার ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য অনেক বেশি এনজয়বল। ফলে আমার ব্যক্তিগত অভিমত এটা। কিন্তু দায়িত্বের জায়গা থেকে আমাকে এখানে এবং আমাদের অন্যান্য উপদেষ্টাকে যে দায়িত্বের জন্য আমরা এখানে এসেছি সে দায়িত্ব আমরা পালন করার চেষ্টা করব।
এর আগে সচিবালয়ে পৌঁছলে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব হাফিজ আহমেদ চৌধুরীসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা আসিফ নজরুলকে অভ্যর্থনা জানান।