ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি বলে দাবি করেছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি বলেন, ‘আমার মা কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেননি। সেই সময়ই তিনি পাননি।’
শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন থেকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই দাবি করেন জয়।শেখ হাসিনার ছেলে বলেন, ‘একটি বিবৃতি দিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার (হাসিনা)। কিন্তু আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের দিকে অগ্রসর হতে লাগল এবং তখন আর সময় ছিল না। এমনকি আমার মা গোছানোর সময়টুকুও পায়নি। সংবিধান যেহেতু আছে, তিনি এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।’
জুলাইয়ের শুরুতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন শান্তিপূর্ণ থাকলেও মাসটির মাঝামাঝি এসে তা সহিংসতায় রূপ নেয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ-ছাত্রলীগের ব্যাপক সংঘর্ষ হলে বহু মানুষ প্রাণ হারায়। আহত হন কয়েক হাজার। এমন আন্দোলনের মধ্যে আগস্টের শুরুতে তা সরকার পতনের আন্দোলনে পরিণত হয়।
৫ আগস্ট আন্দোলনারীদের ঢাকামুখী লংমার্চের দিন শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার খবর আসে। সেদিন বিকেলে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, পদত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন প্রথমে হেলিকপ্টর ও পরে সামরিক বিমানে চড়ে আগরতলা হয়ে দিল্লি পৌঁছান শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই সরকারের মেয়াদ এখনও নির্ধারণ করা হয়নি।
জয় জানান, রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন যদিও সেনাপ্রধান এবং বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সংসদ ভেঙে দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ছাড়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বিষয়টি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা সম্ভব।
শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের দমনে নির্দেশনা দেননি জানিয়ে শেখ হাসিনার ছেলে বলেন, ‘আমার মা ভুল কিছু করেননি। তার সরকারের লোকেরা বেআইনি কাজ করেছেন। তার মানে এই নয় যে- আমার মায়ের নির্দেশেই এ কাজগুলো করেছে। যারা এসবের জন্য দায়ী, তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত।’
জয়ের আশা, তাদের দল আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে। আর সেই নির্বাচন হতে হবে তিন মাসের মধ্যে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন করতে বিএনপিকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে আমি আগ্রহী।’
প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হতে চান জানিয়ে শেখ হাসিনার ছেলে বলেন, ‘চলতি মেয়াদ শেষে এমনিতেই আমার মা রাজনীতি থেকে অবসরে যেতেন। যদি দল আমাকে চায়, আমি অবশ্যই সেটা বিবেচনায় রাখব।’