এদিকে পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কয়েকটি সভা থেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, অনতিবিলম্বে পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের দ্রুত পদোন্নতি দেওয়াসহ যথাস্থানে পোস্টিং দিতে হবে। এছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহারকারী ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের তালিকা করে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
সূত্র জানায়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মিটিং করেন দীর্ঘদিন ওএসডি থাকা ও পদোন্নতিবঞ্চিত ক্যাডার কর্মকর্তারা। শতাধিক কর্মকর্তা এ সভায় যোগ দেন। এখানে বেশ কিছুসংখ্যক নন-ক্যাডার কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তারা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেন।
বৈঠক শেষে কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, প্রশাসন আর আগের মতো দলবাজদের হাতে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। দলবাজমুক্ত একটি নিরপেক্ষ প্রশাসন শুরু থেকে গড়ে তুলতে না পারলে পরিস্থিতি আগের চেয়ে খারাপ হবে। একটি মহল তো দলীয় সাইনবোর্ড ব্যবহার করে বিশেষ সুবিধা নিতে চাইবে। বিশেষ করে যাদের দ্রুত পাদোন্নতি পাওয়াসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে, তারা নিজেদের একেবারে বিএনপি-জামায়াতের একনিষ্ঠ ত্যাগী কর্মী বলে দাবি করবেন। কিন্তু আগের মতো এগুলো যদি চলতে থাকে, তাহলে যে বীর ছাত্ররা রাষ্ট্র মেরামতের জন্য বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ঢেলে দিয়েছেন, তাদের স্বপ্ন বিফলে যাবে। তাদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হবে। কিন্তু আমরা তো এ আত্মত্যাগ বৃথা যেতে দিতে পারি না।
তারা বলেন, এজন্য আমরা বলেছি, যদিও আমাদের ওপর আওয়ামী লীগ সরকার পদোন্নতিবঞ্চিত করাসহ নানাভাবে নিপীড়ন করেছে, তবু আমরা চাচ্ছি একটি সত্যিকার পেশাদার প্রশাসন গড়ে উঠুক। তাই দলীয় পরিচিতি কোনো মানদণ্ড হতে পারে না। সরকারি কর্মচারীরা রাজনীতি করতে পারেন না এবং করতে দেওয়া হবে না। প্রত্যেকে তার মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে পদায়ন ও পদোন্নতি পাবেন। তবে যারা অতীতে ব্যক্তিস্বার্থে প্রশাসনকে দলীয়ভাবে ব্যবহার করেছেন এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে বেসুমার দুর্নীতি করেছেন, তাদের ক্ষমা করা হবে না। তাদেরকে ঘরে-বাইরে বয়কট করাসহ তালিকা করে শাস্তির মুখোমুখি করা হবে। তালিকা করার সময় পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। মনগড়া কিংবা প্রতিপক্ষ মনে করে কাউকে দুর্নীতির তালিকায় যুক্ত করা হবে না। তবে আমরা সবাই কমবেশি জানি কারা কীভাবে অবৈধভাবে টাকা কামিয়ে দেশবিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
এরকম সিদ্ধান্তের কথা নিশ্চিত করেন সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. বাদীউল কবীর। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ন্যায়বিচারভিত্তিক পদায়ন শুরু হয়েছে। তবে ১৬ বছরে যারা সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন ট্যাগ দিয়ে অন্যায়ভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন করেছেন, তাদের ক্ষমা করা হবে না।
নন-ক্যাডার গ্রুপ থেকে সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের ব্যানারে সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের (অপর গ্রুপ) প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব আব্দুল খালেকের নেতৃত্বে দুই দফা মিটিং হয় শিক্ষা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে। এ মিটিংয়ে সিনিয়র নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহকারী সচিব নজরুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান, আবুল কাসেম, আব্দুল খালেক মিয়া, সহকারী সচিব সুলতান আহমেদ, সেলিনা সুলতানা, ফরিদ আহমেদ, জাহেদা খাতুন, ফারজানা ইয়াসমিন, আবু হারিছ মিয়া, প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুল মজীদ, হাফিজুল ইসলাম, তোফাজ্জল হোসেন, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা নূর নেওয়াজ, মাহে আলমসহ অন্যদের মধ্যে আনোয়ার হোসেন, রফিকুল হক ভূঁইয়া, মনিরুজ্জামান, আবু জাফর, জাহাঙ্গীর হোসেন, আবু কায়েস আকন্দ, আব্দুল আউয়াল, মুক্তাদির, মুহম্মদ জুয়েল, আল আমিন, কাজী মোখলেছুর রহমান, আব্দুস সাত্তার, আতিকুর রহমান, রেজাউল ইসলাম, ফরিদুল কবির, দোলন দাস প্রমুখ।
এ সভা থেকে পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের দ্রুত পদোন্নতি নিশ্চিত করাসহ ৫ দফা সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়। উল্লেখযোগ্য দাবির মধ্যে সংযুক্ত পরিষদের পক্ষ থেকে যেসব দাবি ইতোমধ্যে পেশ করা হয়েছে সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করার কথা বলা হয়।
সভা শেষে সংগঠনের মহাসচিব আব্দুল খালেক বলেন, তিনি ২০১৮ সাল থেকে ২৪ দফায় পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন। তার মতো এরকম আরও অনেকের প্রাপ্য পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। তিনি জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণসহ ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দাবি করেন।
অপর একজন কর্মকর্তা বলেন, এখন প্রধান সমস্যা হলো সবাই আওয়ামীবিরোধী সাজার চেষ্টা করছেন। যারা সোমবার দুপুর পর্যন্ত আওয়ামীপন্থি ছিলেন, তারা এখন বলছেন, তিনি নিরপেক্ষ এবং কেউ কেউ একধাপ বাড়িয়ে নিজেকে বিএনপি কিংবা জামায়াতের কর্মী হিসাবেও দাবি করছেন। এছাড়া খুবই দুর্ভাগ্য হলো, নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শুরুতেই দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। যে কারণে মঙ্গলবার সকালে বিবদমান দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হওয়ার মতো বচসা হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েও সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মিটিং করেন। মিটিং শেষে কয়েকজন প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তআ বলেন, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের জোসেফ ও মিন্টু নামে ২ জন কর্মচারীকে অন্যায়ভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আয়েশা ও বাদল নামে আরও দুজনের চাকরি যাওয়ার পথে। এজন্য মন্ত্রণালয়ের সচিব দায়ী। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ সংক্রান্ত তদন্ত রিপোর্টে নথি হারানোর জন্য অভিযুক্তদের দায়ী করা হয়নি, অথচ চাকরি থেকে বিদায় করা হয়েছে। এখানে একটা স্বৈরশাসন চলছে। আমরা এ সচিবের অধীনে চাকরি করতে চাই না।