- ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতাই দেশে
- কেন্দ্র থেকে তৃণমূল— সবাই আতঙ্কে ও আত্মগোপনে
গণরোষের মুখে সোমবার দেশ ছেড়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা। গণভবন থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে করে প্রথমে ভারতের আগরতলায়, পরে সেখান থেকে বিমানে দিল্লির কাছে একটি বিমান ঘাঁটিতে পৌঁছান।
শেখ হাসিনার এই চলে যাওয়ার বিষয়ে অবগত ছিলেন না আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। ফলে দলটির নেতাকর্মীদের তেমন কেউ দেশ ছাড়ার সুযোগ পাননি।
যদিও বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, চলমান আন্দোলনের মাঝেই আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা দেশ ছেড়েছেন। দেশত্যাগ করা নেতাদের বেশিরভাগই একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।
অন্যদিকে দ্বাদশ সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমান নিজে দেশত্যাগ না করলেও পরিবারকে আগেই দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি। একই কাজ করেছেন আওয়ামী লীগের আরও বেশ কয়েকজন নেতা৷
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভাষ্য, কোনো ধরনের সংকেত ছাড়াই আওয়ামী লীগ প্রধানের এই চলে যাওয়া পুরোদস্তুর বিপদে ফেলেছে দলের নেতাকর্মীদের। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সরকার পতন হওয়ায় চাপে পড়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
সোমবার রাত পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের মধ্যে অন্তত ২৯ জনের বাসায় হামলার খবর পাওয়া গেছে৷ তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নেতারা বাসায় ছিলেন না।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রায় সব নেতাই দেশে। টানা প্রায় সাড়ে ১৫ বছর দেশ শাসন করার পর শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার খবরে অনেক নেতাই দেশ ছাড়ার চেষ্টা করেছেন। তবে বিমানবন্দরে একে একে আটকা পড়ছেন। এর মধ্যে জুনায়েদ আহমেদ পলক ও ড. হাছান মাহমুদ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আটক হয়েছেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে না থেকেও দলটির হয়ে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন এমন নেতার সংখ্যাও কম নয়৷ শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর আত্মগোপনে রয়েছেন তারা।
এর বাইরেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ট্রাম্প কার্ড ছিল ‘সাজানো স্বতন্ত্র প্রার্থীরা’। যাদের ব্যবহার করে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখানোর চেষ্টা করেছিল আওয়ামী লীগ। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সেই ‘ডামি’ প্রার্থীরাও দেশেই রয়েছেন।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ এই নেতারা বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে আছেন। নিজস্ব কোনো স্থাপনায় তাদের অবস্থান নেই৷ তারা আত্মীয়-স্বজনের বাসা কিংবা বিভিন্ন নামী আবাসিক হোটেলে আশ্রয় নিয়েছেন বা আশ্রয় চাচ্ছেন।
সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ অনেক আগে থেকেই দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। চলমান অবস্থায় তিনি দেশে ফেরেননি। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, কামরুল ইসলামের মতো নেতারা গা ঢাকা দিয়েছেন। তাদের সঙ্গে স্থানীয় নেতারা কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে পারছেন না। সকল নেতা ও তাদের সহকারীদের মোবাইল ফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে৷
কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি স্থানীয় অনেক নেতারও হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবর প্রচারের পরপরই আত্মগোপনে চলে যান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতারা৷ স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে মহানগর, থানা, ওয়ার্ড, এমনকি ইউনিট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও রয়েছেন। সকল নেতার মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে৷ তবে স্থানীয় নেতাদের অনেকে আবার ফেসবুকে সক্রিয় রয়েছেন। বাসা ও অফিসে হামলার খবর নিজ নিজ ফেসবুক পেজে প্রকাশ করছেন কেউ কেউ।