ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়া বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন। হানিয়া যে বাসভবনে অবস্থান করছিলেন সেখানে অন্তত দুই মাস আগে সেই বোমা পেতে রাখা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) মধ্যপ্রাচ্য, ইরান ও মার্কিন কর্মকর্তাদের তথ্যের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস।
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের পাঁচটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, হানিয়া যে গেস্টহাউসে অবস্থান করছিলেন সেখানে বোমা (এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) অন্তত দুই মাস আগে পেতে রাখা হয়েছিল। বর্তমানে উত্তর তেহরানে অবস্থিত বহুতল ভবনটি ইরানে বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) তত্ত্বাবধানে আছে।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথ অনুষ্ঠান শেষ করে ইসমাইল হানিয়া সেই গেস্টহাউসে নিজের কামরায় প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে বোমা বিস্ফোরিত হয়। এই হামলায় হানিয়ার এক দেহরক্ষীও নিহত হন।
আইআরজিসির দুই কর্মকর্তা জানান, বিস্ফোরণে ভবনটি কেঁপে ওঠে। কয়েকটি জানালা ভেঙে যায় এবং একটি দেয়াল আংশিকভাবে ধসে পড়ে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তেহরান সফরের সময় হানিয়া বেশ কয়েকবার এই গেস্টহাউসে উঠেছিলেন।
গত বুধবার ইরান ও হামাস বলেছে, এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসরায়েল দায়ী।
একই ধরনের মূল্যায়নের কথা জানিয়েছেন কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা। একই দিনে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তাঁরা আগে থেকে অবগত ছিলেন না।
হত্যাকাণ্ডের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জল্পনা শুরু হয় যে, ইসরায়েল ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে হানিয়াকে হত্যা করেছে। যে ক্ষেপণাস্ত্র সম্ভবত একটি ড্রোন বা বিমান থেকে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। কিন্তু এই জল্পনার বিপরীতে এই প্রশ্ন উত্থাপিত হয় যে, ইসরায়েল কীভাবে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফাঁকি দিয়ে দেশটির রাজধানীতেই এমন সাহসী বিমান হামলা চালাতে সক্ষম হলো।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, কিন্তু দেখা যাচ্ছে হত্যাকারীরা ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় একটি ভিন্ন ধরনের ফাঁককে কাজে লাগাতে পেরেছে। হত্যাকারীরা নিরাপত্তার ফাঁক গলে হামলার কয়েক সপ্তাহ আগেই বোমা পেতে লুকিয়ে রাখে। তিনজন ইরানি কর্মকর্তা বলেছেন, এ ধরনের ঘটনা ইরানের বুদ্ধিমত্তা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য একটি বিপর্যয়কর ব্যর্থতা এবং আইআরজিসির জন্য একটি বিশাল বিব্রতকর অবস্থা। কারণ, আইআরজিসিই হানিয়ার সফরের যাবতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করত।
তবে গেস্টহাউসে বোমাটি কীভাবে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল তা স্পষ্ট নয়। মধ্যপ্রাচ্যের কর্মকর্তারা বলেছেন, সম্ভবত হত্যার পরিকল্পনা করতে কয়েক মাস সময় লেগেছিল এবং কম্পাউন্ডটিতে নিবিড় নজরদারি চালিয়েছিল হত্যাকারীরা। দুই ইরানি কর্মকর্তা বলেছেন, তারা জানেন না কীভাবে বা কখন বিস্ফোরকগুলো কক্ষে রাখা হয়েছিল।
কর্মকর্তারা জানান, স্থানীয় সময় বুধবার রাত প্রায় ২টার দিকে বোমাটি বিস্ফোরিত হয়। এর পরপরই ভবনটির আতঙ্কিত কর্মীরা শব্দের উৎস খুঁজতে গিয়ে হানিয়া যে ঘরে থাকতেন সেখানে পৌঁছে যান। কমপ্লেক্সের মেডিকেল টিমটি বিস্ফোরণের পরপরই রুমে ছুটে যায়। তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছেই হানিয়াকে মৃত দেখতে পান।
দুই ইরানি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদের নেতা জিয়াদ আল-নাখালাহ হানিয়ার পাশের কামরায় অবস্থান করছিলেন। তাঁর কামরা তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। মধ্যপ্রাচ্যের পাঁচ কর্মকর্তার মতে, গাজা উপত্যকায় হামাসের ডেপুটি লিডার খলিল আল-হাইয়া বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলে পৌঁছে ইসমাইল হানিয়ার লাশ দেখতে পান।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, দূর থেকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তির সহায়তায় বিস্ফোরণটি ঘটানো হয়। ঠিক একই উপায়ে ২০২০ সালে ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহকে হত্যা করেছিল ইসরায়েল।