‘সরকারের মৃত্যুঘণ্টা বেজে গেছে’ দাবি করে সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত কোটাবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে থাকার ঘোষণা দিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) দুপুরে তোপখানা রোডে নাগরিক ঐক্যের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মঞ্চের নতুন সমন্বয়কারী নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না এ মন্তব্য করেন। গতকাল পুরানা পল্টনে সমাবেশ করতে না দেওয়ার প্রতিবাদে সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকে গণতন্ত্র মঞ্চ।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, যে বাঁধার বিন্দাচল ছিলো, যে ভয়ের পাহাড় ছিলো, যে ভয়ের চাঁদর ছিলো ওগুলো চলে গেছে। যেভাবে লড়াই করছে শিক্ষার্থীরা, যেভাবে লড়াই করছে শিক্ষকরা, গুণীজন, মুরুব্বীরা, আইনজীবীরা, সাংবাদিকরা…সবাই যেরকম করে নেমেছে তাতে এই সরকারের মৃত্যুঘণ্টা বেজেছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা আগেই বলেছি, এই পরিস্থিতি ওরা (সরকার) গায়ের জোরে মোকাবিলা করতে পারবে না। বাংলাদেশের টোটাল ফোর্স নামানো হয়েছে মুভমেন্ট যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে। থামাতে তো পারেননি। সরকার সব রকম নির্যাতন করবার পরেও পারেনি এই আন্দোলন বন্ধ করতে। এই আন্দোলন বাড়ছে, আন্দোলন আরও বাড়বে। গণতন্ত্র মঞ্চ তার সঙ্গে শুরু থেকে ছিলো, এখনও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। যতক্ষণ পর্যন্ত এই সরকারের পরাজয় না হয়।
মঞ্চের নতুন সমন্বয়কারী মান্না বলেন, আমরা শুরু থেকে বলেছি, তোমরা অবৈধভাবে ক্ষমতায় আছো, নির্বাচন করছো না। অতএব নির্বাচন না করে ক্ষমতায় থাকতে গেলে আরও বল প্রয়োগেই তোমাকে ক্ষমতায় থাকতে হবে। একদম চূড়ান্ত নিষ্ঠুরতা-হত্যাকারীর জায়গায় পৌঁছাবার আগেই ক্ষমতা থেকে চলে যাও।
তিনি বলেন, আমাদের আজকে একই আবেদন, এখনও হয়ত সময় আছে… আমি বলছি, এখনও হয়ত সময় আছে পদত্যাগ করো। তারপরে দেশ কিভাবে চলবে সেটা এদেশের জনগণ বুঝবে। তোমরা জনগণের দুশমনে পরিণত হয়েছো, তোমরা জনগণের জন্য কিছু করতে পারবে না। বোধ-বুদ্ধি যদি এখনও থাকে তাহলে জনগণের কথা শুনে, দেওয়ালের কথা শুনে পদত্যাগ করেন। যত তাড়াতাড়ি পদত্যাগ করবেন ততই ভালো।
অবিলম্বে কারফিউ প্রত্যাহারের দাবিও জানান তিনি।
‘এটা এখন কেবল কোটা আন্দোলনে নেই’
মান্না বলেন, এই আন্দোলন কেবলমাত্র কোটার আন্দোলন নয়, এটা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। এই আন্দোলন এখন সরাসরি এসব হত্যার বিচার চায়, ওই সমস্ত মন্ত্রী যারা গুলির নির্দেশ দিয়েছেন, উস্কে দিয়েছেন ছাত্রলীগকে তাদের পদত্যাগ চায় দল থেকে এবং সরকার থেকে। খোদ প্রধানমন্ত্রী সমস্ত হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে যাতে জনগণের কাছে ক্ষমা চান সেজন্য তারা (শিক্ষার্থীরা) দাবি করেছে। এগুলো মানতে হবে।
তিনি বলেন, খারাপ লাগে শুনতে। এতোবড় নেত্রী…বাপরে বাপ। বাঘে গরুতে একসঙ্গে পানি খায়…তিনি এরকম করবেন। কিন্তু ইতিহাস এমন তার চাইতে বড় বড় মানুষের এই কাজগুলো করতে হয়েছে। আমি বলব, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেন। যেভাবে রাজনৈতিক নেতাদের নির্যাতন করছেন এই নির্যাতন বন্ধ করেন। অবিলম্বে তাদেরকে মুক্তি দেন। এটা যদি না করেন তাহলে শেষ পর্যন্ত কি হবে সেটাও আপনারাও দেখবেন।
‘সরকারের ভেতরে গৃহদাহ’
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সরকারের মধ্যে দেখছেন এক ধরনের গৃহদাহ শুরু হয়েছে। গতকাল সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদককে (ওবায়দুল কাদের) নিজের দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে ভুয়া ভুয়া শুনে সভাস্থল ত্যাগ করতে হয়েছে। এটা ….তার মানে সরকার যখন শেষ দিনগুলো পার করে হয়ত আমরা আগামীতে এই ধরণের অনেক ঘটনা দেখব।
তিনি বলেন, গত কয়েকদিনের ছাত্র-তরুণদের আন্দোলনের ঘটনার মধ্য দিয়ে সরকারকে তারা একভাবে বিদায় দিয়ে দিয়েছে। গতকাল আমরা বলেছি, এক সরকারের ভাগ্য এখন একটা চিকন সুতার উপরে ঝুলছে। সরকার টিকে আছে কেবলমাত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপরে… তারা যদি কেবলমাত্র রাষ্ট্র বা প্রজাতন্ত্রের বাহিনী হিসেবে পেশাদারী নিরপেক্ষতা বজায় রাখেন এই সরকারের একদিন বা এক মুহূর্তের জন্য আর ক্ষমতায় থাকার কোনো সুযোগ বাস্তবে কোনো অবকাশ নেই।
তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ এলিট বাহিনীর সদস্যদের প্রতি আমরা আহ্বান জানাতে চাই, যে তরুণরা শিক্ষাঙ্গনে, বিশ্ববিদ্যালয়ে, স্কুলে, কলেজে তারা বুক চিতিয়ে দিচ্ছে। তারা হয় আপনার সন্তান, আপনার ভাই, আপনার আত্বীয়। তাদের বুকে গুলি চালাবেন না। জনগণের খাজনা-ট্যাক্সের পয়সা দিয়ে জনগণের বুকে রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড, ছররা গুলি নিক্ষেপ করবেন না।
তিনি বলেন, সরকারকে আমরা খুব করে বলতে চাই যে, আমাদের বাহিনীগুলো কোনো ভাড়াটিয়া বাহিনী না, এদেশের বাহিনী। এই বাহিনীগুলোকে জনগণের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নাই।
‘সংকটের সমাধান সরকারের পদত্যাগ’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, আজকে বাংলাদেশে এরকম একটি হত্যাযজ্ঞ চালানোর পরে এই লাশের কারবালায় দাঁড়িয়ে এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার আর কোনো অধিকার নেই… এই কথা এখন বাংলার ঘরে ঘরে প্রতিধ্বনি হচ্ছে। দেখেছেন তাদের (সরকার) রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখান করে সারা দেশের মানুষ লাল কাপড়ে, লাল ফিতায়, ফেসবুক লাল প্রতীকে ভরে দিয়েছে। এই যে গণ অনাস্থা এটা জনগণের এই সরকারের প্রতি চূড়ান্ত অনাস্থা জানিয়েছে।
তিনি বলেন, এই অবস্থা আর চলতে পারে না। আমরা সরকারকে বলি, এটা একটা রাজনৈতিক সংকট। রাজনৈতিক সংকটের রাজনৈতিক সমাধান করতে হবে। সমাধান হচ্ছে পদত্যাগ করুন এবং অন্তবর্তীকালীন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। রাজনৈতিকভাবে আলাপ-আলোচনা করে সেটা ঠিক করতে পারব এবং দেশে গণতান্ত্রিক সরকার একমাত্র ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, এদেশে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হবেই।
সংবাদ সম্মেলনে ভাসানী অনুসারি পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম ও জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বক্তব্য রাখেন।