মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুরের পর বিক্ষোভ কর্মসূচি ডাকা হলেও সকাল থেকেই ঢাকার রাস্তায় নেমে পড়েন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে ব্র্যাক, নর্থ সাউথসহ বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আজ মাঠে নেমেছেন। কোথাও কোথাও স্কুলের শিক্ষার্থীরাও রাস্তায় নেমেছেন। রেললাইন অবরোধের ঘটনাও ঘটেছে। ফলে ঢাকার বেশিরভাগ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় দুপুর থেকে। ঢাকার বাইরে মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করায় দূরপাল্লার বাসও রাজধানীতে ঢুকতে পারছে না। ফলে কার্যত অচল হয়ে পড়ে ঢাকা।
মতিঝিল থেকে রামপুরায় যাওয়া শফিকুল ইসলাম দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে ঢাকা মেইলকে বলেন, মনে হয় যেন এই বিপদে পড়তে যাচ্ছি। কোথাও আন্দোলন, কোথাও সরকারি দলের লোকজনের মহড়া দেখতে দেখতে রিকশায় রামপুরা এসেছি। দুই দফা রিকশা পরিবর্তন করতে হয়েছে। ভাড়াও দিতে হয়েছে দ্বিগুণ।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দিনভর উত্তেজনা বিরাজ করেছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে। সংঘর্ষ না হলেও যে কোনো সময় ঘটতে পারে এই আশঙ্কায় ওই এলাকায় যান চলাচল সীমিত রয়েছে। যার প্রভাবে পুরান ঢাকার দিকের সড়কে যানজট দেখা দিয়েছে।
এছাড়া রায়সাহেব বাজার মোড়ে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি ছোঁড়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন। এই ঘটনার পর ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেখানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যে কোনো মূল্যে তারা আন্দোলন চালিয়ে যেতে চান। আন্দোলন চালাতে গিয়ে হামলার মুখে পড়লে সেক্ষেত্রে সরকারকে সমালোচনার মুখে পড়তে হবে।
যদিও প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া এক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ‘তুমি কে, আমি কে, রাজাকার-রাজাকার’ এই স্লোগানকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের বেশ সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।
এদিকে সোমবার ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনায় আন্দোলন নতুন মাত্রা পেয়েছে।
দেখা গেছে, দুপুরের দিকে রাজধানী ঢাকার বেশিরভাগ এলাকায় কোটা আন্দোলন কর্মসূচির প্রভাব পড়েছে। এতে গুরুত্বপূর্ণ অনেক রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। আন্দোলনকারীদের অনেকে রাজধানীর প্রবেশ পথগুলোতে অবস্থান নিয়েছে। এদিকে মহাখালী রেলগেট এলকায় রেলপথ অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের একাংশ। এতে বন্ধ হয়ে যায় রেল চলাচল। ফলে সারাদেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকা।
রাজধানীর মতিঝিল, সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়, মিরপুর-১০, মিরপুর-১৪, কুড়িল, নতুন বাজার, বাড্ডা, শনির আখড়া, চিটাগাং রোড এলাকায় সড়কে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। ফলে বিক্ষোভ করা এলাকার পাশাপাশি এর প্রভাবে আশপাশের বেশিরভাগ সড়কে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল।
রাজধানীর বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয় নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে আশেপাশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়। এতে ওই এলাকার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
অন্যদিকে দনিয়া কলেজ ও এর আশেপাশের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ওই এলাকার সড়ক অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। ফলে যাত্রাবাড়ির মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে গুলিস্তান, চানখারপুল থেকে শনির আখড়াগামী সড়ক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে কোটা সংস্কার ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে এবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও মাঠে নেমেছে। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হওয়া এসব কর্মসূচি দিনব্যাপী চলে।
সকাল থেকেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ক্যাম্পাসের সামনে মূল সড়কে অবস্থান নেয়। এসময় আশপাশে থাকা অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও তাদের সঙ্গে যোগ দেয়।
সকাল সাড়ে ১০টার রাজধানীর বাড্ডায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রাস্তার একপাশ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। ফলে বাড্ডা থেকে কুড়িল বিশ্বরোডমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে মেরুল বাড্ডা থেকে রামপুরাগামী রাস্তায় যান চলাচল আংশিকভাবে চলে। শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে নানা ধরনের স্লোগান দেন।
রাজধানীর নতুন বাজার এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছে ইউনাইটেড বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সের শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ করেছেন।
কুড়িল বিশ্বরোড মোড় অবরোধ করে আন্দোলন করেছেন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। বনানী মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে দেখা যায় প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। তারাও বিক্ষোভে ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ করেছে।
এদিকে, গাবতলি-বাবুবাজার বেড়িবাঁধ সড়ক অবরোধ করে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দেয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে জড়ো হতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে ১১টায় শিক্ষার্থীরা মূল সড়কে অবস্থান নেন। ইউল্যাব শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাগ্রতা পোষণ করে একই স্থানে সমবেত হন শ্যামলী আইডিয়াল টেক্সটাইল পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরাও।