বুধবার (১৯ মে) রাজধানীর কারওয়ান বাজার সার্ক ফোয়ারার সামনে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি এবং তাকে হেনস্তাকারী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের (বিজেসি) নেতৃবৃন্দ। প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে অবিলম্বে মুক্তি ও হেনস্তায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে আজও নানা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার কারাগার থেকে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। ওইদিন যদি তাকে মুক্ত করা না হয় তাহলে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন তারা। প্রতিবাদ ও অবস্থান কর্মসূচিতে সংগঠনটির পক্ষ থেকে চারটি দাবি উত্থাপন করা হয়।
১) অবিলম্বে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। তাকে নির্যাতন ও হেনস্তাকারীদের শাস্তি দিতে হবে।
২) সাংবাদিক নিপীড়ন বন্ধ করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সংবাদকর্মীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৩) ব্রিটিশ আমলের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট বাতিল করতে হবে।
৪) ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সাংবাদিকতার পরিপন্থী অংশ বাতিল করতে হবে।
বক্তারা প্রতিবাদ ও অবস্থান কর্মসূচিতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৯ মে) সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে মুক্তি দেওয়া না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন। বক্তরা ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের জন্য একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ট্রেজারার ও নাগরিক টেলিভিশনের হেড অব নিউজ দ্বীপ আজাদের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ ও অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি (ইআরএফ) সভাপতি রাশেদ আহমেদ প্রমুখ।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশের (আইইবি) সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. শাহাদাৎ হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, সাংবাদিককে লাঞ্ছিত, সরকারি নথি চুরির অপবাদে মামলা দেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। এখানে যে যে কাজের উপযুক্ত তাকে দিয়ে সে কাজ করতে দিতে হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, একটি বিশেষ ক্যাডার সব কুক্ষিগত করে রেখেছে। যার ফলে এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা নিয়মিত ঘটেছে।
ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সংগঠন ইন্ডিয়ান মিডিয়া করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশের (ইমক্যাব) সভাপতি বাসুদেব ধর ও সাধারণ সম্পাদক মাছুম বিল্লাহ এক বিবৃতিতে বলেন, দুর্নীতিবিরোধী প্রতিবেদনের কারণেই রোজিনা ইসলাম এভাবে আক্রান্ত হয়েছেন। স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য এটা ভয়ংকর অশনিসংকেত। আমরা রোজিনার জামিন নয়, গণতন্ত্রের স্বার্থে মামলা প্রত্যাহার এবং হামলাকারীদের বিচার দাবি করছি।
এদিকে বুধবার সকালে অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি, বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে ৬৭টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়নের প্লাটফর্ম সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেমের উপস্থাপনায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নারী প্রগতি সংঘের উপপরিচালক শাহনাজ সুমি। সভায় বক্তব্য রাখেন নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর, স্টেপস টু্ওয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কর্মকার, ব্লাস্টের সিনিয়র স্টাফ ল ইয়ার ব্যারিস্টার শারমিন আক্তার, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিচালক নিনা গোস্বামী, দীপ্ত ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক জাকিয়া কে হাসান, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী, সংসদ সদস্য এবং কর্মজীবী নারীর উপদেষ্টা শিরীন আক্তার, এডাবের কাউসার আলম কনক, কর্মজীবী নারীর সানজিদা সুলতানা।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) সভাপতি মেহেদী হাসান ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুল কবির যৌথ বিবৃতিতে বলেন, রোজিনা ইসলাম সম্প্রতি স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে বেশ কিছু অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছেন। প্রতিবেদনের কারণে তিনি কারও কারও ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার হয়েছেন। এ ঘটনা রোজিনা ইসলাম, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, রাষ্ট্রের দুর্নীতিবিরোধী নীতি ও মূল্যবোধের ওপর প্রচণ্ড আঘাত। রোজিনা ইসলামের মতো একজন স্বনামধন্য অনুসন্ধানী সাংবাদিককে হেনস্তা ও হয়রানির ঘটনা দেশের স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য অশনিসংকেত। যে প্রক্রিয়ায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে রোজিনা ইসলামকে হয়রানি করা হয়েছে, এর মধ্য দিয়ে প্রজাতন্ত্রের ওই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শপথ ভঙ্গ করেছেন।
ঢাকায় কর্মরত আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের সংগঠন ওভারসিজ করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ওকাব) বলেন, সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে আটকে রাখার সময় শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। এ ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকিস্বরূপ। ওকাব অবিলম্বে রোজিনা ইসলামের মুক্তি এবং তার ওপর নির্যাতনের অভিযোগের তদন্ত করে জড়িতদের বিচারের দাবি করছে।