বর্তমানে দেশের ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’ পিএসসির প্রশ্নফাঁস চক্র। সম্প্রতি এই চক্রের ১৭ সদস্যকে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। চক্রের ‘শিরোমণি’ সংস্থাটির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী নিজেই দিচ্ছেন এসব তথ্য। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বলছে— আবেদ আলী অনেকের নাম বলেছেন। তাদের সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া শুরু হয়েছে। দুর্নীতির সত্যতা পেলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
সিআইডি সূত্র জানিয়েছে, প্রশ্নফাঁসকারী চক্রের সঙ্গে বিজি প্রেসের কারও যোগসাজশ আছে কি না, পিএসসির কতজন জড়িত, কে কত টাকা লেনদেন করেছেন, এভাবে কে কত টাকা আয় করেছেন, সেসব টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে কি না— সেসব বিষয়ে তদন্ত চলছে।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদুর রহমান জানান, গ্রেফতার ১৭ জনের মধ্যে; ছয়জন স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। পাশাপাশি সিআইডির তদন্তে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। স্বীকারোক্তি দেয়নি এমন— বাকি ১১ জনকে রিমান্ডে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া এজাহারভুক্ত ১৪ জনসহ অন্য যারা এখনো গ্রেফতার হননি, তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
আবেদ আলীর উদ্ধৃতি দিয়ে সিআইডি সূত্র বলছে, আবেদ আলী পিএসসির ঊর্ধ্বতনদের আরও অনেকের নাম বলেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন পিএসসির সাবেক সদস্য মাহফুজুর রহমানের নামও। তদন্তে যাদের নাম এসেছে; তাদের ব্যাপারে সবধরনের তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে। জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, আবেদ আলীর সঙ্গে প্রশ্নফাঁসে জড়িত পিএসসির আরও একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীকে ১০ কোটি টাকার চেকসহ গত মঙ্গলবার গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী— চক্রটির আরও ৮ সদস্যকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
আবেদ আলীর তথ্য অনুযায়ী, তিনি শতকোটি টাকার সম্পদের মালিক। ঢাকায় তার একটি ছয়তলা বাড়ি, তিনটি ফ্ল্যাট ও একটি গাড়ি রয়েছে। গ্রামের বাড়িতে রয়েছে ডুপ্লেক্স ভবন। তবে সিআইডি বলেছে, আবেদ আলীর আরও সম্পদ রয়েছে। তার অনুসারীরাও কোটি টাকার মালিক।
এদিকে বিসিএসসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে পিএসসির পাঁচজনের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি। তারা হলেন— উপ-পরিচালক আবু জাফর ও জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক আলমগীর কবির এবং পিএসসির কর্মচারী ডেসপাচ রাইডার খলিলুর রহমান ও অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম। গতকাল সন্ধ্যায় পিএসসি থেকে দুদকের সচিব বরাবর এই চিঠি পাঠানো হয়।
পিএসসির জনসংযোগ কর্মকর্তা এস এম মতিউর রহমান জানান, যেহেতু তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য আসছে, তাই এগুলো অধিকতর তদন্ত ও তথ্য সংগ্রহের জন্য দুদকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।