সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিষয়ে সরকারের কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এছাড়া পেনশন স্কিম নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চলমান আন্দোলন সরকার গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানান তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কোটা নিয়ে সিদ্ধান্ত সরকারের না, শিক্ষার্থীরা যে ইস্যুতে আন্দোলন করছে এটাতো সরকারের সিদ্ধান্ত না, আদালত রায় দিয়েছে। এটা আদালতের এখতিয়ার।’
রোববার (৭ জুলাই) সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শুদ্ধাচার পুরস্কার অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল বাংলাদেশে। তার মাঝে ৩০ শতাংশই ছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটা। বাকি কোটার মাঝে ১০ শতাংশ নারী কোটা, ১০ শতাংশ জেলা কোটা, ৫ শতাংশ কোটা ছিল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্য এবং এক শতাংশ কোটা ছিল প্রতিবন্ধীদের।
ওই বছরই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু করে। শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল যে কোটা ৫৬ শতাংশ না হয়ে ১০ শতাংশ করা হোক। তাদের দাবির মুখে সে বছর পুরো কোটা পদ্ধতিই বাতিল করে একটি পরিপত্র জারি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
কিন্তু ২০২১ সালে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা ফিরে পাবার জন্য উচ্চ আদালতে রিট করেন এবং গত পাঁচই জুন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় হাইকোর্ট। তারপর হাইকোর্টের ওই রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। গত বৃহস্পতিবার সকালে কোটার পক্ষের এক আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানি করেনি আদালত। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের এই রায় স্থগিত না করায় পূর্বের নিয়মানুযায়ী সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা আপাতত বহাল রয়েছে।
হাইকোর্টের রায়ের পর গত ৬ জুন থেকেই তা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। মাঝে কিছুদিন আন্দোলন চললেও ঈদুল আজহার কারণে ২৯ জুন পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত রাখেন শিক্ষার্থীরা। পরদিন ৩০ জুন থেকে ফের আন্দোলন শুরু করেন তারা।
অন্যদিকে সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় ‘প্রত্যয়’ স্কিম বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছেন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচিতে ক্যাম্পাসগুলো অচল হয়ে পড়েছে।
কোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আর পেনশন স্কিম নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। সময়মতো সমাধান হয়ে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীরা যে ইস্যুতে আন্দোলন করছে এটাতো সরকারের সিদ্ধান্ত না, আদালত রায় দিয়েছে। এটা আদালতের এখতিয়ার।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা তো এ সিদ্ধান্ত দেইনি। দিয়েছেন আদালত। তারপরও আমাদের দেশের ব্যাপার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান; আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।
শিক্ষদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, তাদের সঙ্গে বসাবসি কখন হবে সেটা আমি এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।