সারাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক এবং কোটাবিরোধীদের চলমান দুই আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করেছে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক জোট ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’।
শুক্রবার (৫ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সমাবেশে মঞ্চের সমন্বয়কারী গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান জোনায়েদ সাকি এই সমর্থনের কথা জানান।
সাকি বলেন, ‘সরকার এক মরণ খেলায় নেমেছে। মানুষকে বন্দী করবার জন্য হত্যা করছে, গুম করছে, দেশ ধ্বংস করছে… ক্ষমতা তারা ছাড়বে না। এই যে ছাত্রছাত্রীরা নেমেছে কোটা সংস্কারের জন্য, এই যে শিক্ষকরা আন্দোলন নেমেছেন। এসব আন্দোলন ফুঁসে উঠছে বলে এখন আবার ছাত্রলীগের গুন্ডা বাহিনী, হেলমেট বাহিনী হলে হলে পাহারাদার বসিয়েছে এবং আন্দোলনটাকে দমনপীড়ন করে ধ্বংস করতে চাইছে। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, সমস্ত আন্দোলন আমাদের। এই ছাত্রদের আন্দোলনে বিরোধী দল কোনো ষড়যন্ত্র করছে না। আমরা পরিষ্কারভাবে ছাত্রদের আন্দোলনকে সমর্থন জানাই, শিক্ষকদের আন্দোলনকে সমর্থন জানাই।’
সমন্বয়কারী বলেন, ‘এই শিক্ষক আমাদের, এই ছাত্র আমাদের, এই শ্রমিক আমাদের, এই দেশের কৃষক আমাদের, এই দেশের জনগণ আমাদের… তাদের প্রতিটি আন্দোলনে আমরা আছি, থাকব।’
সাকি বলেন, ‘এই সব আন্দোলন একসূত্রে গথিত হয় আপনার (শেখ হাসিনা) মসনদ, আপনার গদি তার তখতে- তাউস গলায় গামছা বেঁধে আপনাদের নামিয়ে দেবো… সেই দিন আসছে। নতুন করে প্রস্তুতি নিন। সমস্ত বিরোধী দলকে আমরা ঐক্যবদ্ধ করে গণআন্দোলন, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়েই আমরা সরকারের পতন ঘটাব, তার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। গণতন্ত্র মঞ্চ লড়বে সেই লড়াইয়ে আপনারা যোগ দেবেন।’
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে সম্পাদিত দেশের স্বার্থবিরোধী বিভিন্ন সমঝোতা স্মারকের প্রতিবাদে এই সমাবেশ হয়। সমাবেশের পর বিক্ষোভ মিছিল পুরানা পল্টনে মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
‘এই সরকারের সাথে কোনো আপস নয়’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘সরকারের একটাই লক্ষ্য ক্ষমতায় থাকবে যেকোনো প্রকারে, যেকোনো ভাবে। গুন্ডাবাহিনী লাগবে… আওয়ামী গুন্ডা দিয়ে চলে না। অতএব পুলিশকে লাঠিয়াল বাহিনী বানাচ্ছে। সেজন্যই বেনজীর (সাবেক পুলিশ প্রধান) একের পর এক সম্পত্তি দখল করেছে…হিন্দু-মুসলমান মানে নাই…দেখেনি কেউ এতোগুলো বছর ধরে… তখন চুপচাপ ছিলেন। এখন ভদ্রতা করেন, ফোরটোয়েন্টি করেন, সংসদের মধ্যে বক্তৃতা করে বলেন, আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ শুরু চাই, কোনো দুর্নীতি আমি সহ্য করব না।’
‘এসব কিছুর প্রেক্ষিতে আমরা একটাই কথা বলতে চাই, আমরা অনেক দিন ধরে বলছি, এই সরকারের সাথে আমাদের কোনো আপস হবে না। এই সরকারকে আমরা কোনো পারমিশন দেওয়া, তাদেরকে কোনো অনুমোদন দেবো না। এই সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলবে।’
মান্না বলেন, ‘মাঝে-মধ্যে অনেকে বলেন, অনেক দিন ধরে লড়াই করছেন পারলেন না তো। আমি বলি, কাল পারিনি, আজ পারব, আজ পারিনি, কাল পারব… লড়াইটা চলবে যতদিন পর্যন্ত তাদের পরাস্ত করতে না পারি। এখানে কোনো ক্ষমা নাই, আপস নাই। দুর্নীতিবাজদের চরিত্রহীনদের জরবদখলকারীদের সঙ্গে গণতন্ত্রকামী মানুষেরা আপোস করবে না। সবার কাছে আমার অনুরোধ লড়াই ছাড়া মুক্তি পাবেন না। বাঁচবার জন্য এই লড়াই আপনাদের সবাইকে করতে হবে।’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, ‘দুঃখের বিষয় হলো, এখানে যা কিছু বলেন না কেন, সরকারের কানে তো বাতাস যাবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ট্রানজিট দিয়ে কী অন্যায় করলাম? আমি ওইরকম করে যদি পাল্টা প্রশ্ন করি- ট্রানজিট দিয়ে কী পেলেন? আগে বলা হয়েছিল আমাদের… ট্রানজিট দিলে অনেক টাকা-পয়সা পাওয়া যাবে, ওরা (ভারত) মাশুল দেবে, ট্রানজিট ফি দেবে… আমাদের দেশ সেই টাকায় সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক অন্যান্য উন্নত দেশ হয়ে যাবে। বহুবার আমরা জানতে চেয়েছি, এই পর্যন্ত ট্রানজিট খাতে আমাদের ইনকাম কত? জবাব নাই। বাজেটটা পুরো পড়ে দেখেন আমাদের সরকার কত ইনকাম করছে, তার মধ্যে ট্রানজিটের মাশুলের কথা নাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলছেন, সমঝোতা স্মারকে অসুবিধা কী? এর জবাবে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশের লাভটা কী? এর আগে আপনি ট্রানজিট দিয়েছেন, করিডোর দিয়েছেন। সেখানে আমি প্রধানমন্ত্রীকে পরিষ্কার জিজ্ঞেস করতে চাই যে, আপনি যে ট্রানজিট-করিডোর দিয়েছেন সেখানে বাংলাদেশের লাভের জায়গাটা কী? আমাদের জাতীয় স্বার্থটা কী…. কোনো কিছু বলতে পারবেন।’
ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবু ইউসুফ সেলিমের সঞ্চালনায় সমাবেশে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম ও জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব বক্তব্য দেন।