ছাগলকাণ্ডে স্বামী এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে টানা দুই সপ্তাহ আত্মগোপনে ছিলেন লায়লা কানিজ লাকী। অবশেষে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) সামনে আসেন তিনি। কিন্তু এদিন উপজেলার দুটি অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি সভায় অংশ নিলেও এড়িয়ে চলেন সাংবাদিকদের।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গাড়িতে ওঠার সময় দাম্ভিকতার সুরে লাকী বলেন, বড় বড় সংবাদিকদের ম্যানেজ করেই এখানে এসেছি। পাছে লোকে কত কিছুই বলে। তাতে কিছু আসে যায় না এই চেয়ারম্যান লাকীর।
এর আগে গেল ঈদুল আজহায় সাদিক অ্যাগ্রো থেকে ১২ লাখ টাকার ছাগল বুকিং দিয়ে সামাজিকমাধ্যমে তোপের মুখে পড়েন মুশফিকুর রহমান ইফাত। আয়ের উৎস অনুসন্ধানে গিয়ে বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। খুলে যায় এক সাধারণ এনবিআর কর্মকর্তার অসাধারণ দুর্নীতির মুখোশ। তবে এক খাসি কেড়ে নিয়েছে মতিউরের দুই পরিবারের হাসি। ঈদের আনন্দ ছিল তাদের পরিবারে। বিপদ আন্দাজ করে ঈদের পরপর মাকে নিয়ে মালয়শিয়া পালিয়ে যান ইফাত।
নিজের ছেলে নয় সতিনের ছেলের ছাগলকাণ্ডে পাগল হয়ে পালিয়ে ঈদ করতে হয়েছে নরসিংদীর উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকীকে। এই ঘটনায় স্বামী মতিউরের সঙ্গে লাকীর বেড়েছে দূরত্ব, সম্পর্কে ধরেছে ফাটল। দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করলেও অবশেষে শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শে আসলেন প্রকাশ্যে। নিজের উপজেলা পরিষদের দুটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে দম্ভোক্তি করে বলেন, ‘ঢাকার ও নরসিংদীর জাতীয় পত্রিকা ও টেলিভিশনের বড় বড় সাংবাদিকদের মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে কিনেই উপজেলা পরিষদে এসেছেন লাকী। তারা আর কিছু করতে পারবে না। নিউজসহ, সব থেমে যাবে।
উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেননি লাকীর লোকজন। সভা শেষে কালো রঙের পাজেরো জিপে তিনি উপজেলা থেকে বেরিয়ে যান। রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লাকীর সম্পদের পাহাড় নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। সরকারি কলেজের একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হয়ে কীভাবে তিনি এত সম্পদের মালিক হলেন?
স্থানীয়রা জানান, চিহ্নিত রাজাকার আব্দুল কাদিরের নাতনি এই লাকী। তিনি এখন নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের দুর্যোগ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক। রাজাকার পরিবারের সন্তান হয়ে কীভাবে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত হলেন তা নিয়েও স্থানীয়দের মাঝে চলছে আলোচনা।
তিঁতুমীর কলেজের একজন সাধারণ শিক্ষক থেকে রাতারাতি রাজনীতির মাঠে নেমে সাড়া ফেলে দেন লাকী। স্থানীয় প্রভাবশালী এক আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন রায়পুরা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। নেতার সঙ্গে সম্পর্কের পাশাপাশি স্বামী মতিউরের অবৈধ টাকার জোরেই রাজনীতির ময়দানে তিনি জায়গা করে নেন বলেই মনে করেন নরসিংদীর মানুষ।