দুয়ারে কড়া নাড়ছে ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। নাড়ির টানে নিজ নিজ জেলায় ফিরতে শুরু করেছেন মানুষ। সকাল থেকে ঘরমুখো মানুষের ঢলে বতিব্যাস্ত হয়ে উঠেছে গাবতলী বাস টার্মিনাল। এখনকার কাউন্টারগুলোতে অধিকাংশ বাসের টিকিট আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। যেসব বাসের টিকিট মিলছে, সেগুলো বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।
শুক্রবার (১৪ জুন) সকাল থেকে গাবতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, গাবতলী এলাকায় ঘরমুখো মানুষের ভিড় ক্রমেই বাড়ছে। কাউন্টারের লোকজন যাত্রী হাঁকডাকে ব্যস্ত। প্রধান সড়কে দূরপাল্লার বাসগুলোও যাত্রী পরিপূর্ণ হওয়ার অপেক্ষা করছে।
অধিকাংশ পরিবহনের টিকিট শেষ
গাবতলী বাস টার্মিনালের অধিকাংশ কাউন্টারের টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়ে গেছে। যারা আগে টিকিট কেটে রেখেছেন, তারা খুব সহজেই বাসে উঠতে পারছেন। বিপরীতে টিকিট না কাটা যাত্রীরা পড়েছেন দুর্ভোগে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাঁদরাত পর্যন্ত সব টিকিটের বুকিং শেষ। ফলে অনেক যাত্রী চাইলেও নির্ধারিত বা পছন্দের পরিবহনে ভ্রমণ করতে পারবেন না।
সোহাগ পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার নয়ন ঢাকা পোস্টকে বলেন, চাঁদরাত পর্যন্ত আমাদের সব অনলাইন টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। ফলে কাউন্টারে এসে যাত্রীরা টিকিট পাবেন না। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচটি বাস ছেড়ে গেছে, আরও পাঁচটি বাস ছাড়বে।
তাহলে কী যাত্রীরা বাসে বাড়ি ফিরতে পারবেন না? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চাহিদা বুঝে কর্তৃপক্ষ দু-একটা বাস ছাড়তে পারে। এগুলোর টিকিট কাউন্টার থেকে পাওয়া যাবে।
একই চিত্র হানিফ পরিবহনেও। অনলাইনে এই পরিবহনের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। ফলে অতিরিক্ত যাত্রী ভ্রমণের কোনো সুযোগ নেই।
পরিবহনটির কাউন্টার ম্যানেজার আল আমিন বলেন, যারা আগে টিকিট কেটেছেন, তারা আজ ভ্রমণ করছেন। তাই এখন আসা যাত্রীদের আমরা নিতে পারছি না। কিছু কিছু বাসের দু-একটা সিট ফাঁকা থাকে, সেগুলো কাউন্টার থেকেই বিক্রি হচ্ছে।
পরিচিত পরিবহনগুলোর টিকিট শেষ হয়ে যাওয়ায় আশাহত হচ্ছেন টার্মিনালে আসা যাত্রীরা। মোহাম্মদপুর থেকে আসা রবিউল ইসলাম যাবেন যশোরে। সোহাগ পরিবহনে চড়ে বাড়ি ফেরার ইচ্ছে থাকলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় তা চাপা দিতে হচ্ছে।
রবিউল বলেন, ভেবেছিলাম ভালো একটা বাসে চড়েই বাড়ি যাব। তবে, টিকিট না পাওয়ায় যাওয়া হবে না। এখন অন্য কোনো পরিবহনে যেতে হবে।
গাবতলীতে বাস সংকট
গতকালের তুলনায় আজ যাত্রীর পরিমাণ বেশি। কিন্তু সে পরিমাণ বাস নাই। ঢাকায় ফেরার পথে অনেক বাস জ্যামে আটকে আছে, টাইমলি আসতে পারছে না। বাসের পরিমাণ কম থাকায় যাত্রীরাও নাখোশ হচ্ছেন। কথাগুলো বলছিলেন দিগন্ত পরিবহনের কাউন্টার কর্মী জয়নুল।
তিনি জানান, ঈদযাত্রায় আজকের দিনে গাবতলী টার্মিনালে যাত্রীর পরিমাণ বেশি। দিনে গড়ে একেকটি পরিবহনের ১০ থেকে ১২টি বাস ঢাকা ছেড়ে যায়। তবে, সবগুলো বাস বিভিন্ন কারণে সময়মতো ঢাকায় ফিরতে পারছে না। এতে করে যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে, ক্ষেত্র বিশেষে পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি।
সাকুরা পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার মোর্শেদ বলেন, দিনে আমাদের ১০টি বাস ছেড়ে যায়। তবে, আজ যাত্রীর পরিমাণ কিছুটা বেশি। চাইলেও অনেক যাত্রী আমরা নিতে পারছি না।
অবশ্য, খুব জনপ্রিয় নয়, এমন পরিবহনের ক্ষেত্রে বাসের সংকট খুব একটা দেখা যায়নি। হাঁকডাক করে যাত্রী তুলে নির্দিষ্ট গন্তব্যে ছেড়ে যাচ্ছে বাসগুলো।
চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে টিকিট
কুষ্টিয়ার পাংশায় যাবেন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ফিরোজ আহমেদ। রাবেয়া পরিবহন থেকে দুটি টিকিট কেটেছেন তিনি। অন্যান্য সময়ে যে টিকিটের দাম রাখা হতো ৪০০ টাকা, তার কাছ থেকে তা রাখা হয়েছে ৬০০ টাকা।
ফিরোজ বলেন, সাধারণত পাংশা যাওয়ার ভাড়া হলো ৪০০ টাকা। কিন্তু ঈদ উপলক্ষ্যে আজ ৬০০ টাকা রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থী হিসেবে এ ভাড়াটা আমাদের জন্য বেশি।
এ বিষয়ে রাবেয়া পরিবহনের কাউন্টারে কথা বললে বিক্রয়কর্মী শহিদুল বলেন, ঈদের জন্য ভাড়া একটু বেশি রাখা হচ্ছে।
কাউন্টারের লোকজন বলছেন, বাসের তুলনায় যাত্রীর চাহিদা বেশি, তাই টিকিটের দাম একটু বেশি রাখা হচ্ছে। ঈদের পর আবার আগের দামেই টিকিট বিক্রি হবে।
রাজশাহীগামী যাত্রী খোকন আহমেদ ৬০০ টাকার টিকিট কেটেছেন ৮৫০ টাকায়। সেই টিকিটের জন্যেও বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
তিনি বলেন, বেশিরভাগ পরিবহন চড়া দামে টিকিট বিক্রি করছে। আমাদের তো যেতে হবেই, তাই এই দামে কিনতে হলো।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলেই ব্যবস্থা-বিআরটিএ চেয়ারম্যান
বাস সংকট ও অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, সরকার নির্ধারিত যে ভাড়া, তার চাইতে বেশি ভাড়া নেওয়ার সুযোগ নেই।আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পুরোটা সময় টার্মিনালে রয়েছেন। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।