সদ্য অনুষ্ঠিত ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগের ভাইভা পরীক্ষা প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে বিষয়টি তদন্তেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে অপেক্ষায় থাকা ৪৬ হাজার ভাইভা পরীক্ষার্থীদের আপাতত কোনো বার্তা দিতে পারছে না প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এ অবস্থায় স্থগিত হওয়া ভাইভা আদৌ হবে নাকি নিয়োগ প্রক্রিয়াটি বাতিল হবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, হাইকোর্টের রায়ে কপি এখনো পাইনি। রায়ের কপি পাওয়ার পর পরবর্তী করণীয় ঠিক করবো। কারণ রায়ে নানা ধরনের পর্যবেক্ষণ দিয়ে থাকে। সেটা না দেখে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হবে না।
সচিব বলেন, আমরা আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আদালতের রায়ে যদি পরীক্ষা স্থগিতের কথা বলা হয়, তাহলে পরীক্ষা স্থগিত থাকবে। আর যদি অন্য কিছু বলে তাহলে সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়েও এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা আগে রায়ের কপি দেখবো। এরপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।
এর আগে গত মঙ্গলবার রায়ের পর গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব জানিয়েছিলেন, এ রায়ের পর করণীয় ঠিক করতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয়ের আইন শাখার কর্মকর্তাদের জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। বুধবার বা বৃহস্পতিবার এ বৈঠক হতে পারে। বৈঠকে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। তার মধ্যে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে কথা বলা হবে। আপিলে যদি হাইকোর্টের রায় বাতিল হয় তাহলে ভাইভা নিতে কোনো সমস্যা থাকবে না। এরমধ্যে রায়ের কপি না পাওয়ায় সেই বৈঠকটি হয়নি।
গত মঙ্গলবার (২৮ মে) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের (তিন পার্বত্য জেলা বাদে) এমসিকিউ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ভাইভা স্থগিত রাখার আদেশ দেন। একইসঙ্গে প্রশ্নফাঁস হয়েছে কি না তা তদন্ত করার নির্দেশ দেন।
রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিল। আর এই ফাঁস হওয়া প্রশ্নে অনেকে পরীক্ষা দিয়েছেন। ইতোমধ্যে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার ফলও প্রকাশিত হয়েছে। এ কারণে প্রকাশিত ফল নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার ঘটনার তদন্ত ও পরীক্ষা প্রক্রিয়া স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ঢাকা ও চট্টগ্রামের কয়েকজন পরীক্ষার্থী।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরাধীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রাজস্ব খাতভুক্ত সহকারী শিক্ষক নিয়োগের তৃতীয় ধাপের (ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) লিখিত পরীক্ষা গত ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন ২১ জেলায় (ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
এরপর ২১ এপ্রিল লিখিত পরীক্ষা ফল প্রকাশ করা হয়। এতে ২৩ হাজারে কিছু বেশি প্রার্থীকে উত্তীর্ণ দেখানো হয়। কিন্তু কারিগরি ত্রুটি দেখিয়ে একদিন পর ২২ এপ্রিল সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হয়। এতে ৪৬ হাজার ১৯৯ জন প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। সেই প্রার্থীদের ভাইভা নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।