সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সময় হয়ে গেছে। ঘোরাঘুরি অনেক করেছেন, এখন দয়া করে ঘোরাঘুরি বন্ধ করেন। সঠিকভাবে যেন (সরকারের) দাফন-কাফন হয়, মানুষ যাতে মনে রাখে, সেভাবে চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেন।’
মঙ্গলবার (২৮ মে) দুপুরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি ঘোষিত ১৫ দিনের কর্মসূচির প্রথম দিন দলটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উদ্যোগে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
এসময় মির্জা ফখরুল দেশকে রক্ষায় ভূ-রাজনীতিসহ বিশ্বপরিস্থিতি বিবেচনায় ঐক্যবদ্ধ শক্তি নিয়ে এগোতে হবে বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, এই দেশ জাতিকে রক্ষা করতে হলে আমাদের নতুন চিন্তাভাবনা নিয়ে এগোতে হবে। সেই চিন্তাভাবনার মধ্যে দেশের মানুষ, পৃথিবী, ভূ-রাজনীতি সবগুলোকে সঙ্গে নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে এগিয়ে যেতে হবে। দেশের সকল দেশপ্রেমিক মানুষ, সকল রাজনৈতিক শক্তি ও দেশকে যারা ভালোবাসেন তাদের ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে সাথে নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে; দেশ ও জাতিকে ভয়াবহ দানবের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য।’
১৯৭১ সালে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণায় অনুপ্রাণিত হয়ে দেশবাসীর মতো মির্জা ফখরুলও সেদিন মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বলে জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘আমাদের তো বয়স হয়ে গেছে। এখন কি আর রাইফেল ধরতে পারব? আমরা কি রাস্তায় এখন মারামারি করতে পারব? পারব না। আমাদের এখন দরকার ইয়াং জেনারেশন। যখন যুদ্ধে ছিলাম তখন সবাই তরুণ-যুবক ছিলাম। মাথার মধ্যে দেশ স্বাধীন করা ছাড়া অন্য কিছু ছিল না। কে কী হবে, না হবে সেটা নয় দল মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গিয়েছিল- একমাত্র গোল ছিল দেশকে স্বাধীন করতে হবে। এখন সেই সময় এসে গেছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তখন দেশ স্বাধীন করার জন্য লড়াই করেছিলাম, এখন দেশকে রক্ষা করার জন্য লড়াই করতে হবে। এদেশ বাঁচাতে হবে, সেই লড়াই এখন। এই লড়াইয়ে যদি আমরা পরাজিত হই, তাহলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাব।’
জিয়াউর রহমানের যে ১৯ দফা সেটাকে অনুসরণ করতে হবে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এরা পচে গেছে, দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে গেছে। যতই কথা বলুক, এদের কোনো অস্তিত্ব নেই। তার প্রমাণ এক এক করে সব জায়গায় হচ্ছে। দুর্নীতি ছাড়া আর কিছু নেই, এরা আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত।’
একজন ব্যর্থ লোকের গল্প শুনিয়ে ক্ষমতাসীন সরকার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সময় হয়ে গেছে। ঘোরাঘুরি অনেক করেছেন, এখন দয়া করে ঘোরাঘুরি বন্ধ করেন। সঠিকভাবে যেন (সরকার) দাফন-কাফন হয়, মানুষ যাতে মনে রাখে, সেভাবে চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেন।’
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখানে কথা বলা বিপদ, এখানে আন্দোলন করাও বিপদ। কিন্তু এই বিপদকে কাটিয়ে উঠে আমাদের সাহস করে রুখে দাঁড়াতে হবে। আমাদের যে ন্যায্য দাবি আদায় করতে হবে। অর্থাৎ আমরা তো অন্য কিছু চাই না, আমরা শুধু নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই, সেই নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। তার জন্য আমাদের আন্দোলন অবশ্যই বহাল থাকবে শুধু নয়; তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। তারেক রহমানের নেতৃত্বে এতদূর এসেছি। নানা নিপীড়ন নির্যাতন করা হলেও আমাদের লোকগুলো কাউকে টানতে পারেনি; একজন (শাহজাহান ওমর) ছাড়া আর কাউকে টানতে পারেনি।’
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সিনিয়র সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রকৌশলী নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা সাদেক আহমেদের পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা শামসুজ্জামান দুদু, আবদুস সালাম, ফজলুর রহমান, মজিবর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কর্নেল (অব.) জয়লাল আবেদিন, জহির উদ্দিন স্বপনসহ মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতারা।