যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে উড়োজাহাজ প্রস্তুতকারী বৈশ্বিক জায়ান্ট বোয়িংয়ের ৭৭৭ সিরিজের অন্তত ৩০০টি বিমান উড্ডয়নরত অবস্থায় মাঝ আকাশে বিস্ফোরণের ঝুঁকিতে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের বিমান পরিষেবা বিষয়ক নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউএস ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে এ তথ্য।
যে ৩০০ উড়োজাহাজকে ত্রুটিযুক্ত বলে চিহ্নিত করেছে এফএএ, সেগুলোর সবই যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ যাত্রী পরিষেবার কাজে নিয়োজিত। বাইরের যেসব দেশে বোয়িং ৭৭৭ সিরিজের বিভিন্ন বিমান রয়েছে, সেগুলোকে এর মধ্যে ধরা হয়নি। তবে এফএএ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থাকা ৭৭৭ সিরিজের উড়োজাহাজগুলোও এই আশঙ্কা বা ঝুঁকির বাইরে নয়।
৭৭৭ সিরিজের ৭৭-২০০, ২০০ এলআর, ৭৭৭-৩০০, এবং ৩০০ইআর এবং ৭৭৭এফ উপসিরিজের বিমানগুলোতে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছে এফএএ।
বাংলাদেশের সরকারি উড়োজাহাজ পরিষেবা সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিজস্ব ১৬টি বিমানের মধ্যে চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ সিরিজের।
মূলত ছোটো একটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এত বড় ঝুঁকিতে পড়েছে বোয়িং ৭৭৭ সিরিজের উড়োজাহাজগুলো। এফএএ’র তথ্য অনুসারে, ত্রুটিযুক্ত উড়োজাহাজের ফুয়েলট্যাংক শীতল ও ঝুঁকিমুক্ত রাখতে জন্য যে প্রযুক্তি বা ইগনেশন সোর্স ব্যবহার করা হয়, সেটি দুর্বল। ফলে ইঞ্জিন গরম হতে থাকলে তা ফুয়েলট্যাংকে প্রভাব ফেলবে এবং তার জেরেই আকাশে উড্ডয়নরত অবস্থায় বিস্ফোরণের ঝুঁকিতে পড়বে উড়োজাহাজগুলো।
‘ফুয়েল ট্যাংকের ভেতরে থাকা ত্রুটিপূর্ণ ইগনিশন সোর্স এই সমস্যার জন্য দায়ী। এফএএ অবিলম্বে বোয়িং কর্তৃপক্ষকে ৭৭৭ সিরিজের সবগুলো বিমান পরীক্ষার নির্দেশ দিচ্ছে,’ বৃহস্পতিবারের বিবৃতিতে বলেছে এফএএ।
প্রসঙ্গত, ১৯১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটল শহরে প্রতিষ্ঠিত বোয়িং কোম্পানি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বিমান প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। পরে কোম্পানির সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের আর্লিংটনে স্থানান্তর করা হয়।
কোম্পানির বয়স ১০০ বছর পেরিয়ে গেলেও যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বজুড়ে এখনও দাপটের সঙ্গে চলছে বোয়িংয়ের বিমানগুলো। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ দুই বিমান পরিষেবা সংস্থা আমেরিকান এয়ারলাইন্স এবং ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের পুরো ফ্লাইট অপারেশন পরিচালনা করে বোয়িংয়ের বিভিন্ন সিরিজের বিমান।
তবে ২০২১ সালে বোয়িংয়ের ৭৮৭ ড্রিমলাইনার সিরিজের বিমানগুলোতে গুরুতর যান্ত্রিক ত্রুটির অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের তদন্ত ও যাচাই শেষে ওই বছরই ড্রিমলাইনার সিরিজের বিমান তৈরি স্থগিত রাখতে বোয়িং কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয় এফএএ। সেই সঙ্গে এই সিরিজের সবগুলো বিমান গ্রাউন্ডেড করে যথাযথ পরীক্ষা ও ত্রুটি সারানোর পরামর্শও দেয় মার্কিন বিমান পরিষেবা নিয়ন্ত্রণক সংস্থা।
২০২৩ সালের শেষ দিকে বোয়িংয়ের ৭৭৭ সিরিজের বিমানগুলোর বিরুদ্ধেও যান্ত্রিক ত্রুটির অভিযোগ ওঠার পর জানুয়ারি থেকে তদন্ত শুরু করে এফএএ। তার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে বৃহস্পতিবার।
এএফএএ’র এই বিবৃতির কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া এখনও জানায়নি বোয়িং কর্তৃপক্ষ।