রংপুরের বদরগঞ্জে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট না দিলে ভোটারদের রড গরম করে সোজা করার হুমকি দিয়েছেন এক ইউপি সদস্য। হুমকিদাতা ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম উপজেলার কালুপাড়া ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) তার হুমকি দেওয়ার ভিডিও বক্তব্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ৪৬ সেকেন্ডের ভিডিও ক্লিপটি ঢাকা পোস্টের কাছে এসেছে।
এলাকাবাসী জানায়, ফজলে রাব্বি সুইট পর পর দুইবার উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন। এবারও তিনি চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। তিনি রংপুর জেলা যুবলীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক হাসান তবিকুর চৌধুরী ওরফে পলিন চৌধুরী।
আগামী ৫ জুন এ উপজেলায় ভোট হবে। গত বুধবার (১৫ মে) রাতে কালুপাড়া ইউনিয়নের বৈরামপুর গ্রামে উঠান নির্বাচনী বৈঠক করেন ফজলে রাব্বি সুইট। সেখানে বক্তব্য দেন ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম।
বক্তব্যে তিনি বলেন, সুইট এলাকার সন্তান। গত নির্বাচনে এলাকার দুই কেন্দ্রে সুইটের বিপক্ষ প্রার্থীরা ভোট পেয়েছিলেন ৩৩টি। আশা করি, এবার যেন সেটাও না পান।
উপস্থিত ভোটারদের উদ্দেশে শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা এবার শনাক্ত করব সুইটের বিরুদ্ধে কে। আমরা প্রথমে তাদের আদর করব, হাত ধরব, প্রয়োজনে পা ধরব। তবু যদি সোজা না হয়, তাহলে কী করব? ইউপি সদস্যের এমন প্রশ্নের জবাবে উপস্থিত কয়েকজন বলেন, ‘ঢাশি ধরব।’ এ সময় শফিকুল ইসলাম বলেন, না, প্রয়োজনে জ্বলন্ত আগুনে শিক গরম করে সোজা করব।
সুইটের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হাসান তবিকুর চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, ওই হুমকি দেওয়ার দুই দিন আগে (গত সোমবার) বৈরামপুর এলাকায় আমার যুবলীগের কর্মী সমাবেশ ছিল। ওই ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে তার সাঙ্গপাঙ্গরা কর্মী সমাবেশের শামিয়ানা ছিঁড়ে ফেলেন এবং আমার এক কর্মীর বাড়িতে হামলা চালান। বিষয়টি থানায় জানালেও ওসি ব্যবস্থা নেননি। এ কারণে ওই ইউপি সদস্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
হাসান তবিকুর চৌধুরী আরও বলেন, ভোট করার অধিকার সবার আছে। ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে কাজ করতেই পারেন। কিন্তু ওই ইউপি সদস্যের হুমকি ধমকিতে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এ বিষয়ে ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, ওটা (বৈরামপুর এলাকা) হামার বাড়ি। সুইটকে ভোট দিতে ভাই-ভাতিজাদের নিয়ে হাইস্কুল মাঠে ঘরোয়া বৈঠক করেছি। সেখানে যদি পরিবারের মধ্যে দু-একজন ট্যারী হয়, তাহলে হামরা ডাংগাই না মারি সেটা হামার ব্যাপার। হামরা কি অন্য এলাকাত গিয়্যা সেটা করোছি?
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মীর বাড়িতে হামলা চালাইনি। ওই কর্মীর বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারকে সুইটের পক্ষে ভোট করার কথা বলেছি।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী ফজলে রাব্বি সুইটের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। মোবাইলে এসএমএস পাঠানো হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বদরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ মিঞা বলেন, ওই ইউপি সদস্যের হুমকির বিষয়টি আমার জানা নেই। কেউ অভিযোগ করলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
ওসি আরও বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বাড়িতে হামলার বিষয়ে থানায় কেউ অভিযোগ করেনি।