উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অনেকেই জীবিকানির্বাহের তাগিদে ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন। অন্যদিকে, অনিচ্ছা সত্ত্বেও একীভূত করে দেওয়া হচ্ছে দুর্বল ব্যাংক। আবার অনিয়মের মাধ্যমে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হচ্ছে ঋণ। ব্যাংক খাতে সুশাসনের অভাব, নানা অব্যবস্থাপনা, দখল, কেলেঙ্কারি আর লুটপাটের খবর আসছে প্রতিদিনই। এমন পরিস্থিতিতে গ্রাহকের মধ্যে এক ধরনের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। ফলে ব্যাংক খাতে কমে গেছে আমানত। তবে, আমানত কমলেও বেড়েছে ঋণের পরিমাণ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বলছে, এক মাসের ব্যবধানে ব্যাংক থেকে গ্রাহকরা ১২ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা আমানত তুলে নিয়েছেন। এর মধ্যে ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলো থেকে আমানত তুলে নেওয়া হয়েছে আট হাজার ৮৩২ কোটি টাকা। অপরদিকে, আলোচ্য এসব ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ১১ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ইসলামি ব্যাংকগুলোর আর্থিক পরিসংখ্যানে এসব তথ্য উঠে এসেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে তফসিলি ব্যাংকগুলোর আমানত দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৫৭ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে শরীয়াহ ধারার ব্যাংকগুলোর আমানত তিন লাখ ৭৫ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা। আগের মাস ডিসেম্বরে তফসিলি ব্যাংকগুলোর আমানত ছিল ১৭ লাখ ৭০ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। ইসলামি ব্যাংকগুলোর আমানতের পরিমাণ ছিল তিন লাখ ৮৪ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা।
সেই হিসাবে গত ডিসেম্বর মাসের তুলনায় জানুয়ারিতে অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে তফসিলি ব্যাংকগুলোর আমানত কমেছে ১২ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। এ সময় ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর আমানত কমেছে আট হাজার ৮৩২ কোটি টাকা।
একই সঙ্গে জানুয়ারিতে ব্যাংক খাতের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৩৫ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা। যা ডিসেম্বরে ছিল ১৯ লাখ ২৪ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক মাসে ঋণ বেড়েছে ১১ হাজার ১৫২ কোটি টাকা।
এদিকে, আলোচ্য ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর ঋণ বা বিনিয়োগ বেড়েছে তিন হাজার ৬৪২ কোটি টাকা। জানুয়ারিতে ব্যাংকগুলোর ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চার লাখ ৪৯ হাজার ৭৩ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোর ঋণের পরিমাণ ছিল চার লাখ ৪৫ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা।
ইসলামি ব্যাংকগুলোর আমানত কমলেও প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর ইসলামি ব্যাংকিং শাখাগুলোতে আমানত বেড়েছে দুই হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর ইসলামি ব্যাংকিং শাখাগুলোতে আমানতের পরিমাণ ছিল ২১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। জানুয়ারিতে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ২৭০ কোটি টাকা। যদিও একই সময়ে এসব ব্যাংকের ইসলামি ব্যাংকিং উইন্ডোগুলোতে আমানত কমেছে এক হাজার ৮১৬ কোটি টাকা।
সবমিলিয়ে গত জানুয়ারি শেষে ব্যাংক খাতে ইসলামি ধারার ব্যাংকিংয়ে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চার লাখ ১৩ হাজার ৯৬৯ কোটি টাকা। আগের মাস ডিসেম্বরে আমানত ছিল চার লাখ ২২ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাসের ব্যবধানে ইসলামি ধারার ব্যাংকিংয়ে আমানত কমেছে আট হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা।
২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। এক বছর আগে অর্থাৎ ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা।