নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মল্লিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল শিকদারকে (৪৩) গুলি করে হত্যার জেরে ফের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে নিহত চেয়ারম্যানের প্রতিপক্ষ দলের দুইজন গুলিবিদ্ধ হন।
গতকাল শুক্রবার (১০ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার কুন্দশী এলাকায় দুর্বৃত্তের ছোড়া গুলিতে সাবেক চেয়ারম্যানের মৃত্যুর পর রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফের গোলাগুলি হয়।
মোস্তফা কামাল শিকদার লোহাগড়া উপজেলার মঙ্গলহাটা গ্রামের আকরাম হোসেন শিকদারের ছেলে। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও উপজেলার মল্লিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের তিনবারের চেয়ারম্যান ছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মোস্তফা কামাল শিকদার শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার লোহাগড়া বাজার থেকে কুন্দশী-মঙ্গলহাটা গ্রামীণ সড়ক ধরে মোটরসাইকেলে করে বাড়িতে ফিরছিলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তিনি কুন্দশী এলাকার ছমির শিকদারের বাড়ির সামনে পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিনি মারা যান। এদিকে মোস্তফা কামাল শিকদার গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফের মঙ্গলহাটা গ্রামে গুলিবর্ষণ হয়।
এতে চেয়ারম্যানের প্রতিপক্ষের ফয়সাল শেখ (২৪) এবং পলাশ মোল্যা (৪০) গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক সৈয়দ ফরহাদ বিন হক বলেন, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রথমে একজন সাবেক চেয়ারম্যান গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আসেন। পরে রাত ১০টার দিকে আরও দুইজনকে আনা হয়। প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত যে, তারা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উপজেলার মল্লিকপুর ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল শিকদার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে ২নং ওয়ার্ডের তিনবারের সদস্য আকরাম হোসেন লিপনও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। দুজনই নির্বাচনে পরাজিত হন। নির্বাচনের সময় থেকে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। ২০২২ সালে সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল শিকদারের লোকজনের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে আকরাম হোসেন লিপনের হাত কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় দুই পক্ষই থানায় মামলা করে। দুপক্ষের দীর্ঘদিনের বিরোধের ধারাবাহিকতায় ১০ মে রাতে এসব ঘটনা ঘটে।
লোহাগড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাঞ্চন কুমার রায় বলেন, দুর্বৃত্তদের ছোড়া গুলিতে মোস্তফা কামাল শিকদার গুলিবিদ্ধ মারা গেছেন। ময়নাতদন্তের জন্য তার মরদেহ নড়াইল সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনার পর গতকাল রাতে আরও দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মেহেদি হাসান বলেন, মূলত দুটি গ্রুপের সামাজিক দ্বন্দ্বের জেরে এটি ঘটেছে। ঘটনায় জড়িতদের মোটামুটিভাবে চিহ্নিত করতে পেরেছি। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা এখন স্বাভাবিক। বড় কিছু ঘটার সম্ভাবনা নেই।