এমন অবস্থায় রাফাহতে ইসরায়েলের হামলা একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র ঠেকাতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। রোববার (২৮ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রই ইসরায়েলকে গাজার সীমান্ত নগরী রাফাহতে আক্রমণ করা থেকে বিরত রাখতে পারে। এই আক্রমণ কয়েক দিনের মধ্যে হতে পারে জানিয়ে তার আশঙ্কা, এই হামলা ফিলিস্তিনি জনসংখ্যার বেশিরভাগকে ভূখণ্ডটি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করতে পারে।
রোববার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এক বিশেষ বৈঠকে প্রেসিডেন্ট আব্বাস বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানাই, ইসরায়েলকে রাফাহতে হামলা না করার জন্য বলুন। আমেরিকাই একমাত্র দেশ যারা ইসরায়েলকে এই অপরাধ থেকে বিরত রাখতে সক্ষম।’
ইসরায়েল গত কয়েক সপ্তাহ ধরে শহরটিতে সর্বাত্মক আক্রমণ চালানোর হুমকি দিয়ে আসছে। দেশটি বলেছে, রাফাহতে হামাসের অবশিষ্ট ব্যাটালিয়নগুলোকে ধ্বংস করাই তাদের লক্ষ্য। এছাড়া গত সপ্তাহে রাফাহতে বিমান হামলা আরও বাড়িয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
তবে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো মিসরীয় সীমান্ত ঘেঁষে থাকা দক্ষিণ গাজার এই শহরটিতে আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকার জন্য তেল আবিবকে অনুরোধ করেছে। মূলত গাজার এই শহরটিতে ইসরায়েলের সাত মাসের দীর্ঘ আক্রমণের জেরে বিভিন্ন স্থান থেকে পালিয়ে আসা দশ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন।
আব্বাস বলেন, রাফাহতে ‘ছোট হামলা’ হলেও সেটি ফিলিস্তিনি জনগণকে গাজা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করবে। তার ভাষায়, ‘তখন ফিলিস্তিনি জনগণের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিপর্যয় ঘটবে।’
আব্বাস পুনর্ব্যক্ত করেন, তিনি জর্ডান এবং মিসরে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত হিসেবে পাঠিয়ে দেওয়াকে মানবেন না। তিনি বলেছেন, ইসরায়েল একবার গাজায় তাদের অভিযান শেষ করলে তারা (ইসরায়েল) ফিলিস্তিনি জনগণকে অধিকৃত পশ্চিম তীর থেকে জর্ডানে জোর করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে এবং এতে তিনি উদ্বিগ্ন।
আল জাজিরার জেইন বসরাভি রামাল্লা থেকে বলেছেন, আব্বাসের এই মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ প্রথমবারের মতো পিএ-র একজন সিনিয়র নেতা এমন কোনও বক্তব্য দিলেন। তবে তিনি আরও বলেছেন, ফিলিস্তিনিরা পিএ নেতার কাছ থেকে আরও বেশি আশা করে।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণের ফলে এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৭৭ হাজারের বেশি মানুষ।
মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।
এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েলের আক্রমণের মুখে রাফাহতে আশ্রয় নেওয়া কয়েক লাখ লোকের এখন আর অন্য কোথাও পালানোর জায়গা নেই।
জাতিসংঘের কর্মকর্তারা এবং মানবাধিকার গোষ্ঠী সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, রাফাহতে হামলা হবে বিপর্যয়কর।