ঈদকে কেন্দ্র করে জমজমাট ব্যবসা অনলাইন শপগুলোর। করোনা সংক্রমণের ভয়ে যারা শপিংমলে যাননি তারা ঘরে বসেই ঈদের কেনাকাটা করেছেন। এবার ঈদে স্বাভাবিক সময়ের থেকে প্রায় দ্বিগুণ বিক্রি বেড়েছে বহু অনলাইন শপে। গড়ে সব ধরনের পণ্য মিলিয়ে ঈদ উপলক্ষ্যে ৭০% বিক্রি বেড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, টাকার অঙ্কে মোট বিক্রির পরিমাণ প্রায় ১৫০০ কোটি। ই-কমার্সের প্রতি ক্রেতাদের আস্থা বাড়ায় ব্যবসা বেড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে আইনি কাঠামোতে আসলে ই-কমার্স সেক্টর আরও এগিয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা তাদের। দেশীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম ই-ক্যাবের মার্কেটিং বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম শোভন জানান, ই-কমার্স সেল এর ক্ষেত্রে, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় লকডাউনে কমে গেলেও গত ২ সপ্তাহে সর্বশেষ ফ্যাশনওয়ার সেল বিক্রি দ্বিগুন হয়ে গেছে।
বা ১০০% শতাংশ বেড়েছে। যদিও রোজার প্রথমদিকে লকডাউন যখন শিথিল হয় তখনি বেড়েছে ২০-২২ শতাংশ। শহরের পাশাপাশি গ্রামেও ডেলিভারীর হার বেড়েছে। গড়ে সব ধরনের পণ্য মিলিয়ে ঈদ উপলক্ষ্যে ৭০% বিক্রি বেড়েছে। প্রতিদিন রোজার আগে দেড়লাখ টাকার পণ্য ডেলিভারী হলেও ঈদে তা ২ লাখ ৫০ হাজারের কাছাকাছি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এবার ব্রান্ড শপের পণ্য তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট এবং মার্কেটপ্লেস থেকে অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশী সেল হচ্ছে। এবং যেসব ফেসবুক পেইজের সুনাম রয়েছে তারাও ভাল সাড়া পেয়েছে। ব্রান্ডের পণ্য বিক্রি বৃদ্ধির কারণে বাস্কেটভ্যালু গড়ে ২০০০ টাকা ছুঁয়েছে। যা গত বার ছিল ১৫শ টাকার মতো।
শোভন আরও বলেন, ধারণা করা হচ্ছে ঈদ উপলক্ষ্যে গত ১ মাসে ১৫০০ কোটি টাকার ডেলিভারিবল বা হাতে ধরে বিতরণযোগ্য পণ্য অনলাইনে বিক্রি হয়েছে। ভার্চুয়াল প্রোডাক্টস বা নন ডেলিভারিবল পণ্য এই হিসেবে ধরা হয়নি। সাধারণত বুদ্ধিভিত্তিক বা অবিতরণযোগ্য পণ্য ঈদ উপলক্ষ্যে বিক্রি বৃদ্ধি পায়না। তবে ১৫শ কোটি টাকার এর মধ্যে ১ হাজার থেকে ১২শ কোটি টাকার পোশাক ও গেজেট বিক্রি হয়েছে বলে ধারণা করছি। গতবার ডেলিভারীর ক্ষেত্রে যে সমস্যা হয়েছিল, যেমন ডেলিভারীম্যান সংকট ও সময়মতো ডেলিভারী দিতে না পারে। এবার এধরনের সমস্যা খুব যৎসামান্য। কারণ অনলাইন উদ্যোক্তারা গতবারের অভিজ্ঞতার আলোকে এবার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। অনলাইনে বিক্রির সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এবার যে সমস্যা ছিল সেটা হলো প্রথমত পুঁজি সংকট।
দ্বিতীয়ত অনলাইন উদ্যোক্তারা ঠিক বুঝতে পারছিলেন না কি ধরনের সাড়া তারা পাবেন যেহেতু শেষ মুহুর্তে শপিংমল খুলে দেয়া হয়েছে। ই-ক্যাব থেকে সরকারের অনুমতি নিয়ে ডেলিভারীর সময়সীমা বাড়িয়ে রাত ১০টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত করা হয়েছিল পরে তা বাড়িয়ে ২৪ ঘন্টা করে দেয়া হয়েছে। তাই সমস্যা কিছুটা কমেছে। এবার যেটা নতুন দেখা গিয়েছে সেটা হলো নামকরা ব্রান্ডসমূহের পণ্য অনলাইনে বিক্রি বেড়েছে। গ্রামের ক্রেতাদের ক্রয়ের হার বেড়েছে। পণ্যের গড়মূল্য বা বাস্কেটভ্যালু বেড়েছে। ক্রেতাদের মধ্যে বিশ্বাস অবিশ্বাসের মূলে অন্যতম কারণ হচ্ছে ই-কমার্সের নীতিমালা ও রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠান না থাকা। ই-কমার্সের মাধ্যমে কেনাকাটা করতে গিয়ে একাধিকবার প্রতারিত হয়েছেন ঢাকার একটি বেসকারী ব্যাংকের কর্মকর্তা জোনায়েদ হাবীব। প্রতারণার শিকার হওয়ার পর তিনি পুলিশের কাছে শরনাপন্ন হয়েছেন। প্রতারক ই-কমার্স সাইটির কোনো নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ না থাকায় তার হদিস পায়নি পুলিশ। এজন্য ই-কমার্স সাইটগুলোকে একটি সুনির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসলে প্রতারণার ঘটনা কমে আসতো বলে মনে করেন জোনায়েদ হাবীব।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে শৃঙ্খলায় আনতে ইতিমধ্যে ‘ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। নির্দেশিকা তৈরির উদ্দেশ্য হচ্ছে ডিজিটাল কমার্স পরিচালনায় স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা, ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, ডিজিটাল ব্যবসার প্রসারের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, এই খাতে শৃঙ্খলা আনয়ন করা এবয় প্রতিযোগীতামূলক বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা। বিক্রেতা ও ভোক্তা উভয়ের স্বার্থ সংরক্ষণ করা হয়েছে এ নীতিমালায়। এ নির্দেশিকার বিধান প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে কর্তৃপক্ষ বিক্রেতা বা মার্কেটপ্লেসের ট্রেড লাইসেন্স বা কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন, ভ্যাট নিবন্ধন বাতিল করার পাশাপাশি ওই মার্কেটপ্লেস নিষিদ্ধ করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। এ জাতীয় অনেক নির্দেশিকাসহ, ই-কমার্সকে আরও সহজলভ্য করতে একটি নীতি সমৃদ্ধ ব্যবসায়ীক মডেল প্রণয়ন করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ জন্য বাণিজ্যমন্ত্রী এবং মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং ই-কমার্স খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকও করেছেন।