ঋণের শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদারসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত কমিশন বৈঠক থেকে চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়। শিগগিরই দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান আদালতে চার্জশিট দাখিল করবেন বলে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দুদক সূত্রে জানা যায়।
আসামিদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ ও দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
আসামিরা হলেন- আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদার, আনান কেমিক্যাল লিমিটেডের মালিক ও এমডি অমিতাভ অধিকারী, পরিচালক প্রিতিশ কুমার হালদার, উজ্জল কুমার নন্দী, পূর্ণিমা রানী হালদার, রাজিব সোম, রতন কুমার বিশ্বাস ও পরিচালক ওমর শরীফ, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের সাবেক এমডি রাশেদুল হক ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত এমডি সৈয়দ আবেদ হাসান, পরিচালক মো. নুরুল আলম, নাসিম আনোয়ার, মো. নুরুজ্জামান, এম. এ হাশেম, মোহাম্মদ আবুল হাসেম, জহিরুল আলম, মো. আনোয়ারুল কবীর, নওশেরুল ইসলাম ও পরিচালক বাসুদেব ব্যানার্জি, ভিপি নাহিদা রুনাই, এভিপি আল মামুন সোহাগ, সিনিয়র ম্যানেজার রাফসান রিয়াদ চৌধুরী ও কোম্পানি সেক্রেটারি রফিকুল ইসলাম খান।
দুদক সূত্রে জানা যায়, ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান আনান কেমিক্যাল লিমিটেডের এমডি অমিতাভ অধিকারী ২০১৫ সালের ১৪ অক্টোবর ২৯ কোটি টাকা ঋণের জন্য ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাশেদুল ইসলাম বরাবর আবেদন করেন। আবেদনের পর কোনো প্রকার যাচাই-বাছাই ছাড়াই ২৫ অক্টোবর ২৩২তম বোর্ড সভায় ঋণ মঞ্জুর করা হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে বেনামি প্রতিষ্ঠান আনান কেমিক্যালের নামে ৬৩ কোটি ৪১ লাখ ৪৯ হাজার ৮০০ টাকা উত্তোলন করা হয়। যা ২০২২ সালে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত সুদসহ ১০৩ কোটি ১৬ লাখ ৭০ হাজার ৭১৯ টাকা দাঁড়িয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আনান কেমিক্যালের নামে যে টাকা ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে নেওয়া হয়েছে সেটি আত্মসাৎ ও পাচারে পিকেসহ ২৩ জনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লি. এর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অসৎ উদ্দেশ্যে আনান কেমিক্যাল ইন্ড্রাষ্ট্রিজ লি. এর চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালকদেরকে ঋণ পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেন।
এর আগে ২০২১ সালে পাঁচটি ভুয়া ও কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ৩৫১ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করে তা আত্মসাতের অভিযোগে পিকে হালদারসহ ৩৩জনের বিরুদ্ধে ৫টি মামলা করে দুদক। এর মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড থেকে অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠান আনান কেমিক্যাল লিমিটেডের নামে ৭০ কোটি ৮২ লাখ টাকা ঋণ তুলে নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে একটি মামলা হয়। ওই মামলা কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে দুদক।
সংশ্লিষ্ট মামলার আসামি ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের এমডি রাশেদুল হক, ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ আবেদ হাসান ও সিনিয়র ম্যানেজার রাফসান রিয়াদ চৌধুরী গ্রেপ্তার হন। এরপর রিমান্ড শেষে আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় নিজেদের অপরাধের সঙ্গে শতভাগ জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। আসামিরা পরবর্তীতে, অপরাধলব্ধ ও আত্মসাৎকৃত অর্থ বিভিন্ন লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে পিকে হালদার সিন্ডিকেটের ভুয়া কোম্পানি ও বিভিন্ন ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবে হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে অবস্থান গোপনপূর্বক আত্মসাৎ ও পাচার করেন।
আলোচিত পিকে হালদার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত মোট ৪৩টি মামলা দায়ের করেছে দুদক। এর মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের অর্থ আত্মসাতে ২২টি মামলা ও এফএএস লিজিংয়ের অর্থ আত্মসাতে ১৩ মামলা হয়। এছাড়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সম্পদের মামলা রয়েছে।
যার মধ্যে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ২০২৩ সালে প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদারকে ২২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ২০২২ সালে ১৪ জুন পিকে হালদারকে তার চার সহযোগীসহ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে গ্রেপ্তার করে দেশটির অর্থসংক্রান্ত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট (ইডি)। বর্তমানে পিকে হালদার ভারতে অবস্থান করছে।