নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী লুৎফুল হাবীব ওরফে রুবেলের প্রার্থিতা বাতিলের আবেদন করেছেন অপহরণ ও মারধরের শিকার প্রতিপক্ষ প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনের ছেলে মুনয়েম হোসেন আকাশ।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে তিনি এ বিষয়ে একটি দরখাস্ত জমা দেন। মুনয়েম হোসেন আকাশ নিজেই ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর রিসিভ কপি নাটোর নির্বাচন অফিসেও দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা নির্বাচন অফিস ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ শেখ।
লুৎফুল হাবীব রুবেল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক।
মনোনয়ন পত্র দাখিলের শেষ দিন গত সোমবার (১৫ এপ্রিল) বিকেলে সিংড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন অনলাইনে আবেদনের পর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে মনোনয়নপত্রের প্রতিলিপি জমা দিতে আসেন। সেখানে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তাকে মারধর করে কালো মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে বেধড়ক মারধর করে বাড়িতে পৌঁছে দেয়। সেখান থেকে পরিবারের লোকজন নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। একদিন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউতে) থাকার পরে বর্তমানে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাধারণ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ঘটনার পর থেকেই ভুক্তভোগী চেয়ারম্যান প্রার্থীর পরিবার এঘটনায় দায়ী করে আসছেন নির্বাচনে একমাত্র প্রতিপক্ষ প্রার্থী লুৎফুল হাবীব রুবেল ও তার সমর্থকদের। এ ঘটনায় পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছেন। এর একজন সুমন আহমেদ (৩০) আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নাটোরের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তার জবানবন্দি নেওয়া হয়। একমাত্র প্রতিপক্ষ প্রার্থী লুৎফুল হাবীবের পক্ষ নিয়েই সুমনসহ অন্য আসামিরা দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণ ও মারধর করেছেন, আসামি সুমন এমন জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান।
এদিকে বুধবার নির্বাচন কমিশনে দেলোয়ার হোসেনের ছেলে মুনয়েম হোসেনের জমা দেওয়া দরখাস্তে বাবার ওপর হামলা বিবরণ দিয়ে লুৎফুল হাবীব রুবেলের প্রার্থিতা বাতিলের দাবি জানানো হয়।
দরখাস্তে মুনয়েম হোসেন বলেছেন, আমার বাবাকে নাটোর জেলা নির্বাচন অফিসের ভিতর থেকে সিংড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের একমাত্র সম্ভব্য প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী জনাব লুৎফুল হাবীবের নির্দেশে তার সন্ত্রাসী বাহিনী মারধর করতে করতে অফিসের বাইরে নিয়ে যায় এবং সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষমাণ একটি কালো রংয়ের মাইক্রোবাসে করে অপহরণ করে এবং মারপিট করে। বিভিন্ন টেলিভিশনে ও অনলাইন প্লাটফর্মগুলোতে প্রচারিত সিসিটিভি ফুটেজ এ ঘটনার প্রমাণ বহন করছে। জাতীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন প্রত্রিকায় এ সংক্রান্ত বহু রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। যা আবেদনে সংযুক্তির কথা উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, তার বাবা বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তিনি এখনও পুরোপরি আশঙ্কামুক্ত নন। লুৎফুল হাবীব যদি নির্বাচন কারার সুযোগ পান তাহলে দেশের মানুষের মধ্যে নির্বাচন সম্পর্কে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হবে।
এ বিষয়ে মুনয়েম হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, একজন প্রার্থীকে নির্বাচন অফিসের ভেতর থেকে ধরে নিয়ে পেটানো হয়। যারা হামলা করলো তাদের প্রার্থিতা বাতিল না করলে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হবে এবং আবারও হামলা হতে পারে। সাধারণ মানুষ হিসেবে আমাদের কী নির্বাচন করার অধিকার নেই।
বৃহস্পতিবার সকালে লুৎফুল হাবীব রুবেলের মোবাইল ফোনে এ বিষয়ে কথা বলতে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
নাটোর জেলা নির্বাচন অফিসার ও নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ শেখ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সিংড়া উপজেলা চেয়ারম্যান পদে লুৎফুল হাবীবের প্রার্থিতা বাতিলের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর আবেদনের একটি রিসিভ কপি আমাদের অফিসেও পেয়েছি। এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ব্যবস্থা নেবেন।