নিজেদের ঘরের মাঠে এর আগে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে কখনোই না হারা ম্যানচেস্টার সিটি গতকাল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগের মাচটিতেও খেলতে নেমেছিল ফেভারিট হিসেবেই। লস ব্লাঙ্কোসদের বিপক্ষে পুরো ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করেছে সিটিজেনরাই, তবে শেষ পর্যন্ত হারতেই হয়েছে স্বাগতিকদের। শুরুতেই রদ্রিগোর গোলে এগিয়ে যাওয়া রিয়াল লিড ধরে রেখেছিল ম্যাচের ৭৬ মিনিট পর্যন্ত। তবে এরপর সমতা ফেরান কেভিন ডি ব্রুইনা। নির্ধারিত নব্বই মিনিটের পর অতিরিক্ত সময়েও কোনো দল আর গোল না পাওয়ায় টাইব্রেকারে গড়ায় ম্যাচ। আর শুট আউটে রিয়ালের জয়ের নায়ক গোলরক্ষক আন্দ্রে লুনিন। সিটিজেনদের দুইটি শট ফিরিয়ে ৪-৩ গোলে রিয়ালকে জেতান তিনি।
নির্ধারিত নব্বই মিনিটের পর অতিরিক্ত সময়ের খেলার পরও কোনো দলই জয়ী না হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। টাইব্রেকারে শুরুতেই সিটিজেনদের হয়ে গোল করেন জুলিয়ান আলভারেজ। তবে রিয়ালের হয়ে প্রথম শটটিই মিস করেন লুকা মদ্রিচ। এরপর সিটির হয়ে টাইব্রেকারে লক্ষ্যভেদ করেছেন ফিল ফোডেন এবং গোলরক্ষক এদেরসন। তবে বার্নার্দো সিলভা এবং মাতেও কোভাচিচের শট ফিরিয়ে দেন রিয়াল গোলরক্ষক লুনিন। অন্যদিকে রিয়ালের হয়ে পরের চারটি শটেই লক্ষ্যভেদ করেন জুড বেলিংহ্যাম, লুকাস ভাসকেস, নাচো ফের্নান্দেস ও আন্টোনিও রুডিগার। ফলে ৪-৩ গোলের জয় নিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে রিয়াল।
রিয়ালের বিপক্ষে ঘরের মাঠের এই ম্যাচে সিটি কতোটা আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছে তা বোঝা যায় পরিসংখ্যানের দিকে তাকালেই। ৬৮ শতাংশ সময় বল নিয়ন্ত্রণে রেখে গোলের উদ্দেশ্যে ৩৩টী শট নিয়েছেন ডি ব্রুইনা-ফোডেনরা যার ৯টিই ছিল লক্ষ্যে। পুরো ম্যাচে সিটি কর্ণার পেয়েছে মোট ১৮টি যেখানে রিয়াল পেয়েছে কেবল ১টি সেটিও ম্যাচের ১০৬ মিনিটের সময়ে।
ম্যানসিটি গতকাল মূলত হেরেছে রিয়ালের রক্ষণের কাছে। আর্লিং হলান্ড নজরবন্দী থাকলেও পুরো ম্যাচে একের পর এক আক্রমণে রিয়ালের রক্ষণে ত্রাস ছড়িয়েছেন ফিল ফোডেন, কেভিন ডি ব্রুইনা, জ্যাক গ্রিলিশরা। তবে ম্যাচের শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া রিয়াল এরপর পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলে নিজেদের গোলপোস্টের সামনে। ফলে টনি ক্রুজ, এদোয়ার্দো কামাভিঙ্গা, আন্তোনিও রুডিগার, দানি কারভাহাল, নাচো ফার্নান্দেজদের মানবদেয়াল পেরিয়ে গোলের দেখা পায়নি পেপ গার্দিওলার শিষ্যরা। আর রক্ষণে গতকাল লস ব্লাঙ্কোসদের হয়ে দুর্দান্ত সব সেভ করেছেন গোলরক্ষক লুনিন।
সিটির ঘরের মাঠ ইতিহাদ স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরুতেই যা একটু আক্রমণ গড়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। অবশ্য প্রথম দশ মিনিটের সেই আক্রমণেই গোলের দেখাও পেয়ে যায় স্প্যানিশ জায়ান্টরা। ১২ মিনিটে রক্ষণ থেকে লং পাসে বল বাড়িয়ে দেন দানি কারভাহাল যা ভালভার্দে-বেলিংহামের পা ঘুরে যায় ভিনিসিয়ুসের পায়ে। ব্রাজিলিয়ান এই স্ট্রাইকারের কাছে থেকে বল পেয়ে শট নেন রদ্রিগো। তবে শট ফিরিয়ে দেন তারই স্বদেশী গোলরক্ষক এদেরসন। তবে প্রতিহত করলেও বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেননি ব্রাজিলিয়ান এই গোলরক্ষক, পরে আবার বল পেয়ে লক্ষ্যভেদ করতে ভুল করেননি রদ্রিগো। তাঁর এই গোলেই এগিয়ে যায় রিয়াল।
এদিকে প্রথমে এগিয়ে যাওয়ার পর শুরু হয় রিয়ালের জমাট রক্ষণশীল প্রদর্শনী। পিছিয়ে পড়ার পর একের পর এক আক্রমণ শাণাতে থাকে সিটিজেনরা। তবে ডি ব্রুইনা-জ্যাক গ্রিলিশদের সব পরিকল্পনাই নস্যাত করেন দেন রুডিগার-কারভাহালরা। ফলে লিড নিয়েই প্রথমার্ধ শেষ করে লস ব্লাঙ্কোসরা। এদিকে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর পরও নিজেদের রক্ষণ সুরক্ষিত রাখতেই বেশি ব্যস্ত থাকেন কার্লো আনচেলত্তির শিষ্যরা। সিটির অর্ধে খুব বেশি হুমকি তৈরি করতে দেখা যায়নি বেলিংহাম-ভিনিসিয়ুসদের।
এদিকে ম্যাচের যখন বাকি আর মিনিট বিশেক তখন একাদশে পরিবর্তন আনেন গার্দিওলা। গ্রিলিশকে তুলে নিয়ে তিনি মাঠে নামান জেরেমি ডকুকে। ডকু আসার পরই নতুন করে প্রাণসঞ্চার হয় সিটির আক্রমণে। এরই ধারাবাহিকতায় সমতাসূচক গোলের দেখাও পেয়ে যায় স্বাগতিকরা। ৭৬ মিনিটে ডকুর নেয়া শট ক্লিয়ার করতে পারেননি রুডিগার, বল পেয়ে যান ডি ব্রুইনা, গোলপোস্টের কাছেই বল পেয়ে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি।
ডি ব্রুইনার গোলে নির্ধারিত নব্বই মিনিট পর দুই লেগ মিলিয়ে ম্যাচে ৪-৪ সমতা থাকায় খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। তবে এই ত্রিশ মিনিটেও রিয়ালের রক্ষণ গলিয়ে গোলের দেখা পায়নি সিটিজেনরা। ফলে শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারেই গড়ায় ম্যাচটি।