হাসপাতালে ঈদের দিন কাটছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের। তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ফলে ঈদের দিনে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের সাক্ষাত হচ্ছে না।
গত ২৭ এপ্রিল থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ৩ মে থেকে তিনি হাসপাতালে করোনারি কেয়ার ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন। ইতোমধ্যে তিনি কোভিড নেগেটিভ হলেও বেশকিছু জটিলতা রয়েছে। ফলে এবারের ঈদে তিনি হাসপাতালে থাকছেন। অবশ্য খালেদা জিয়ার হাসপাতালে ঈদ এটাই প্রথম নয়। কারাবন্দি থাকাবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার সময়ও একাধিক ঈদ তিনি হাসপাতালে কাটিয়েছেন।
এদিকে ১ মে থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। দলীয় সূত্রে জানা যায়, তিনি বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছেন। তার শারীরিক অবস্থা ১ মে এর তুলনায় ভালো হলেও ঈদের দিনে তাকে হাসপাতালে কাটাতে হবে। কোভিড সংক্রমণের কারণে এ বছর কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই। তার ওপর দল দুটির শীর্ষ দুই নেত্রী হাসপাতালে থাকায় নেতাকর্মীদের মধ্যে ঈদের বাড়তি উদযাপনের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।
ঈদের দিন খালেদা জিয়ার সঙ্গে হাসপাতালে তার ভাই শামীম ইস্কান্দার ও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের দেখা করবেন। এরপর দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করবেন তিনি। আর রওশন এরশাদের সঙ্গে তার ছেলে সাদ এরশাদ নিয়মিত যেমন দেখা করতে যান, তেমনই ঈদের দিনও তিনি দেখা করতে যাবেন বলে জানা গেছে।
এই দুই শীর্ষ নেতা ছাড়া দল দুটির বেশিরভাগ নেতার ঈদের দিন কাটবে অনেকটা পারিবারিক আবহে। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, এবার দলটির অধিকাংশ সিনিয়র নেতা ঢাকায় স্বেচ্ছায় হোম কোয়ারেন্টিনে থেকে নিজ নিজ পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করবেন। দলটির স্থায়ী কমিটির বেশিরভাগ নেতা করোনা পরবর্তী বিভিন্ন রোগে এখনও ভুগছেন। ভাইস চেয়ারম্যানদের অনেকের একই অবস্থা। ফলে এবারের ঈদে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের বেশিরভাগই নিজ নিজ নির্বাচনীয় এলাকায় ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছেন না।
দলটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ডা. এ জেড এম জাহিদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্সসহ দলের নেতারা ঢাকায় ঈদ করবেন।
বিএনপির নেতারা বলছেন, দেশে বর্তমানে বিধিনিষেধ চলছে। যদিও সরকারের অব্যবস্থাপনার কারণে বিধিনিষেধ সেভাবে কার্যকর হয়নি। অন্যদিকে, দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া হাসপাতালে। তার শারীরিক অবস্থা এখন পর্যন্ত সন্তোষজনক নয়। কখন কী ঘটে বলা যায় না। তাকে হাসপাতালে রেখে নেতাদের এলাকায় গিয়ে ঈদ উদযাপন করা দৃষ্টিকটুও দেখায়। ইতোমধ্যে দেশে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। ফলে, নেতাদের বয়স ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতাদের মধ্যে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ঈদের দিন সকালে নিজ নির্বাচনী এলাকা সিরাজগঞ্জ যাবেন। তবে, তিনি এলাকায় গেলেও ঘর থেকে বের হবেন না। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ বাবলু, কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারসহ অধিকাংশ নেতা এবার ঢাকায় ঈদ করছেন। জানা গেছে, রাজনীতিবিদের মধ্যে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী দীর্ঘদিন স্বেচ্ছায় ঘরবন্দি আছেন। এ দুই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ গত বছরের মার্চ মাসে দেশে করোনার সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর থেকে স্বেচ্ছায় ঘরবন্দি আছেন।