ডলার সংকট কাটাতে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এতে সংকট একটুও কমেনি। উলটো রিজার্ভ থেকে ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে। চলতি অর্থবছরের প্রায় নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) রিজার্ভ থেকে ১ হাজার কোটি ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর কাছে এই ডলার বিক্রি করা হয়েছে। একই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশকিছু ব্যাংকের কাছ থেকে প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার কিনেছে। এতে বিপিএম ৬ অনুযায়ী দেশের রিজার্ভ এখন ১ হাহজার ৯৪৫ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত ১ হাজার ৪ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি অব্যাহত রাখায় দেশের গ্রস রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৮১ ডলারে। গত বছর একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৩ হাজার কোটি ডলারের বেশি।
সূত্র বলছে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ডলার-সংকটে রয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে জ্বালানি ও নিত্যপণ্য আমদানি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়ছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরেও রিজার্ভ থেকে ১ হাজার ৩৫৮ কোটি ডলার বিক্রি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
গত অর্থবছরের শুরুর দিকে দেশে ডলারের সংকট দেখা দিলে আমদানিতে কড়াকড়ি শর্ত আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সময় নিত্যপণ্য বাদে বিলাসী পণ্য আমদানিতে শতভাগ মার্জিন দেওয়া হয়। এতে এলসি নিষ্পত্তি ও পরিশোধ কমে যায়।
অন্যদিকে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৫৬ কোটি ১০ লাখ ডলার। সেই হিসাবে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে প্রবাসী আয় বেড়েছে ৩৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
এদিকে ডলার সংকট কাটাতে ঈদের পরই ‘ক্রলিং পেগ’ চালু করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলার দর নিয়ন্ত্রিত ও বাজারভিত্তিক করতে দ্রুত ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালুর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। মার্চের প্রথম দিক থেকে এই পদ্ধতিতে ডলার ক্রয় বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত থাকলেও ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি বাড়ায় এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি ঈদের মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়তে পারে এই বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। ল্যাতিন আমেরিকার উরুগুয়েতে প্রথম ক্রলিং পেগের প্রচলন ঘটে। বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় বতসোয়ানা, হন্ডুরাস ও নিকারাগুয়ায় ক্রলিং পেগ পদ্ধতি।
এই পদ্ধতি টাকার বিপরীতে ডলারের দামের ভিত্তি হবে রিয়াল ইফেকটিভ একচেঞ্জ রেট (রিয়ার) ও নমিনাল ইফেকটিভ একচেঞ্জ রেট (নিয়ার)। বৈশ্বিক মানদণ্ডের আলোকে ‘ক্রলিং পেগ’ রেটের সঙ্গে ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকার করিডোর রাখা হবে। আর স্মার্ট সুদহারের আলোকে বাংলাদেশ ফরেন একচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ডলারের দর নির্ধারণ করবে। এই প্রদ্ধতিতে চালু হওয়ার সাথে সাথে দেশে ডলার দর বাড়বে।