মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) বিকেলে ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন। ফাঁসির দণ্ড পাওয়া আসামি হলেন কাঁঠালিয়া উপজেলার জোড়াখালি এলাকার মো. কবির জমাদ্দারের ছেলে মো. ইয়াসিন (২৮)। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া আসামি হলেন একই গ্রামের বাবুল জমাদ্দারের স্ত্রী রেহেনা বেগম (৪৫)। রেহেনা বেগম নিহত শিশু মেহেদী হাসানের সম্পর্কে আপন চাচি। এ সময় শাহাদাত হোসেন নামে অপর এক আসামিকে খালাস দেওয়া হয়। মামলার তিন শিশু আসামি শিশু আদালত থেকে খালাস পেয়েছে। রায় ঘোষণার সময় দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, কাঁঠালিয়া উপজেলার জোড়খালি গ্রামের শাহীন জমাদ্দার এর মেয়ে মাদরাসা যাতায়াতের পথে প্রতিবেশী ইয়াসিন জমাদ্দার উত্ত্যক্ত করত। এতে বাধা দিত শাহীন জমাদ্দার এর শিশু ছেলে মেহেদী হাসান (৮)। এতে মেহেদী হাসানের ওপর ক্ষিপ্ত হয় ইয়াসিন। ২০১৫ সালের ২৮ আগস্ট বিকেলে বাসা থেকে বের হয় শিশু মেহেদী হাসান। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে ৩১ আগস্ট বিকেলে স্থানীয় আনসার আলীর বাগানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় শিশু মেহেদী হাসানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ৩১ আগস্ট মেহেদী হাসানের বাবা শাহিন জমাদ্দার প্রতিবেশী তিন শিশুসহ ছয়জনকে আসামি করে কাঁঠালিয়া থানায় মামলা দায়ের করে।
এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাঁঠালিয়া থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুস সালাম ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দায়ের করেন। এ মামলায় শিশু আদালতে আসামি শাওন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া সত্ত্বেও খালাস পায়।
পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর সর্বশেষ ঝালকাঠি সিআইডির এসআই সিদ্দিকুর রহমান পুনরায় তদন্ত করে আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দায়ের করেন। আদালত ১৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে রায় ঘোষণা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত পিপি আ.স.ম. মোস্তাফিজুর রহমান মনু ও আসামিদের পক্ষে নাসিরুদ্দিন কবির মামলা পরিচালনা করেন। এ মামলার আসামি মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন ও অপর তিন শিশু আসামিকে শিশু আদালত থেকে খালাস প্রদান করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আ স ম মোস্তাফিজুর রহমান মনু বলেন, ১৪ জন সাক্ষির সাক্ষ্যের ভিত্তিতে আদালত আসামিদের এই দণ্ড প্রদান করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ঘটনা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী মল্লিক মু. নাসির উদ্দীন কবির বলেন, ফাঁসির দণ্ড পাওয়া আসামি মো. ইয়াসিন ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফেঁসে গেছেন। এ ঘটনার আসল আসামি মো. ইয়াসিন হচ্ছে আসামি রেহেনা বেগমের অন্য এক ছেলে। নামের মিল থাকায় নির্দোষ ইয়াসিনের ফাঁসির দণ্ড হয়েছে। আসামি ইয়াসিন উচ্চ আদালতে আপিল করবে।