এছাড়া রাফাহতে হামলা ‘ভুল’ পদক্ষেপ হবে বলেও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে সতর্ক করে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি এবং সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে গত এক মাসে প্রথমবারের মতো সোমবার ফোনে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। সেখানে নেতানিয়াহুকে বাইডেন বলেছেন, গাজার রাফাহতে বড় আকারের স্থল আক্রমণ হবে একটি ‘ভুল’।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ইসরায়েলের রাফাহ আক্রমণের পরিকল্পনা এবং সম্ভাব্য ‘বিকল্প পদ্ধতি’ নিয়ে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটনে সিনিয়র ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোর জন্য নেতানিয়াহু বাইডেনের অনুরোধে সম্মত হয়েছেন।
এর আগে সর্বশেষ গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ফোনে কথা বলেছিলেন বাইডেন ও নেতানিয়াহু। আর এরপর থেকে ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানির সংখ্যা এবং গাজায় দুর্ভিক্ষের বিষয়ে জাতিসংঘের সতর্কতা এবং অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটিতে ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতির সমালোচনায় ক্রমশ সোচ্চার হয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।
এই পরিস্থিতিতে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান সোমবার এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ব্যাখ্যা করেছেন কেন তিনি রাফাহতে ইসরায়েলের বড় পরিসরের সামরিক অভিযান পরিচালনার সম্ভাবনা নিয়ে এতো গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’
সুলিভান বলেন, ‘সেখানে বড় আকারের স্থল অভিযান পরিচালনা করা হলে তা হবে একটি ভুল, এটি আরও নিরীহ বেসামরিক মানুষের মৃত্যু ঘটাবে। ইতোমধ্যেই বিরাজমান ভয়াবহ মানবিক সংকটকে আরও খারাপ অবস্থায় নিয়ে যাবে, গাজায় নৈরাজ্যকে আরও গভীরে নিয়ে যাবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে ইসরায়েলকে আরও বিচ্ছিন্ন করবে।’
বাইডেন নেতানিয়াহুকে ওয়াশিংটনে সামরিক, গোয়েন্দা ও সাহায্য কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি সিনিয়র দলও পাঠাতে বলেছেন। গাজায় ইসরায়েলের বর্তমান রাফাহ পরিকল্পনা সম্পর্কে ‘মার্কিন উদ্বেগ শুনতে’ – এবং হামাসকে লক্ষ্যবস্তু করে অভিযানের বিষয়ে ‘বিকল্প একটি পদ্ধতি’ নিয়ে আলোচনা করতে তারা ওয়াশিংটন যাবেন।
সুলিভান বলেন, নেতানিয়াহু ‘এই আলোচনা এবং এই বিষয়ে যুক্ত থাকতে সম্মত হয়েছেন।’
সুলিভান উভয় নেতার মধ্যে ফোনে এই কথপোকথনকে ‘ব্যবসার মতো’ বলে বর্ণনা করেছেন। কেন এই দুই নেতা গত ৩২ দিন ধরে কথা বলেননি তা ব্যাখ্যা করে সুলিভান বলেন, একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত মুহূর্তের জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেন নেতানিয়াহুকে কল করা থেকে বিরত ছিলেন।
এর আগে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার শেষ নিরাপদস্থল রাফাহতে হামলার অনুমোদন দেয় দখলদার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। গত ১৫ মার্চ যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর নেতানিয়াহুর দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়।
এরপরই রাফাহতে হামলার অনুমতি দেওয়ার বিরোধিতা করে যুক্তরাষ্ট্র। সেসময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন জানান, তারা রাফাহতে হামলা চালানোর কোনো সুস্পষ্ট এবং কার্যকর পরিকল্পনা দেখেননি। ইসরায়েল যদি রাফাহতে কোনো ধরনের সামরিক অভিযান চালাতে চায় তাহলে একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা দেখাতে হবে।
মূলত হামাস ও দখলদার ইসরায়েলের মধ্যে গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে যুদ্ধ শুরু হয়। ওই সময় এক জায়গা থেকে আরেক জায়গা করে ১৩ লাখ মানুষ রাফাহতে এসে আশ্রয় নেন। এখন সেই রাফাহতে হামলার পরিকল্পনা করছে ইসরায়েলিরা।
তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ বলেছে, রাফাহতে হামলা চালালে সেখানে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এ কারণে তারা বলছে, সেখানে যদি কোনো হামলা চালানো হয় তাহলে যত বেসামরিক মানুষ আছেন তাদের সরে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে।