রোববার (১০ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
মার্কিন, ব্রিটিশ ও ফরাসি বাহিনী বলেছে, তারা ইয়েমেনের উপকূলে ইরান-সমর্থিত হুথি গোষ্ঠীর একের পর এক হামলা প্রতিহত করেছে। অন্যদিকে মার্কিন সেনাবাহিনী জানিয়েছে, শনিবার ভোরে লোহিত সাগরে অন্তত ২৮টি আনক্রুড এরিয়াল ভেহিকেল (ইউএভি) ভূপাতিত করা হয়েছে।
জোট বাহিনীর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজের ওপর ‘বড় আকারের’ আক্রমণের আসন্ন হুমকি নির্ধারণ করার পরে (সেটি প্রতিহত করতে) পদক্ষেপ নিয়েছে তারা।
সশস্ত্র গোষ্ঠী হুথি বলেছে, প্রোপেল ফরচুন নামে একটি বাণিজ্যিক জাহাজ এবং বেশ কয়েকটি মার্কিন ড্রেস্টয়ারকে লক্ষ্যবস্তু করেছে তারা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ডের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হুথিদের হামলায় কোনও মার্কিন বা জোট বাহিনীর সামরিক যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি এবং বাণিজ্যিক জাহাজের কোনও ক্ষতির খবরও পাওয়া যায়নি।
মূলত গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের জেরে হুথিরা গত প্রায় ৫ মাস ধরে লোহিত সাগরে ইসরায়েল ও পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে যুক্ত জাহাজগুলোতে হামলা করছে। গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন অব্যাহত থাকার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে যুক্ত জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করছে তারা।
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্রান্ট শ্যাপস বলেছেন, রয়্যাল নেভি ফ্রিগেট এইচএমএস রিচমন্ড গত শুক্রবার রাতে হুথিদের নিক্ষেপ করা দুটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
শ্যাপস আরও বলেন: ‘যুক্তরাজ্য এবং আমাদের মিত্ররা মানুষের জীবন বাঁচাতে এবং নৌ-চলাচলের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা চালিয়ে যাবে।’
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় (এমওডি) বলেছে, টাইপ ২৩ ফ্রিগেট এবং আন্তর্জাতিক মিত্ররা হুথিদের ড্রোন হামলা ‘সম্পূর্ণ প্রতিহত’ করেছে। হুথিদের ড্রোন কোনও কিছুতে আঘাত করেনি বা কোনও ধরনের ক্ষয়ক্ষতিও হয়নি।
এছাড়া ফরসি যুদ্ধজাহাজ এবং ফাইটার জেটগুলো এডেন উপসাগরে ইউরোপীয় নৌ মিশন ও একটি পণ্যবাহী জাহাজকে লক্ষ্য করে আক্রমণ করতে আসা চারটি ড্রোনকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে।
এর আগে গত সপ্তাহে দক্ষিণ ইয়েমেনে একটি পণ্যবাহী জাহাজে হুথিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তিন ক্রু সদস্য নিহত হন বলে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন। হামলার পর বার্বাডোজের পতাকাবাহী ট্রু কনফিডেন্স জাহাজ থেকে ক্রুরা পালিয়ে যান।
মার্কিন সামরিক বাহিনী সেসময় জানায়, রাত সাড়ে ১১টায় এডেন উপসাগরে কার্গো জাহাজ ‘ট্রু কনফিডেন্সে’এই হামলার ঘটনা ঘটে। হুথিরা বলছে, গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের সমর্থন দিতেই তাদের হামলা চলছে।
মূলত ইরান-সমর্থিত হুথিরা লোহিত সাগরের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য রুট দিয়ে যাতায়াতকারী ইসরায়েল ও পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে যুক্ত জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করে চলেছে এবং তাদের এই হামলা অব্যাহত রয়েছে। আর হুথিদের জাহাজে বারবার হামলার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো প্রায়ই ইয়েমেনে হামলা করছে।
লোহিত সাগরে হুথিদের এই হামলা বিশ্ব বাণিজ্যকে ব্যাহত করেছে এবং অনেকের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে বলে দাবি পশ্চিমাদের। মূলত হুথিরা রাজধানী সানাসহ ইয়েমেনের বিশাল অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন অব্যাহত থাকার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে যুক্ত জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করছে তারা।
প্রসঙ্গত, ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক থাকার সন্দেহে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাণিজ্যিক জাহাজগুলোতে হুথিদের হামলা লোহিত সাগরে উত্তেজনা ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে। মার্কিন ও ব্রিটিশ বাহিনী হুথিদের বিরুদ্ধে হামলার জবাব দিয়েছে। এর বিপরীতে হুথিরা আমেরিকান এবং ব্রিটিশ স্বার্থকেও হামলার বৈধ লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে।
এছাড়া হুথিদের বিরুদ্ধে হামলার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র একটি বহুজাতিক নৌ টাস্কফোর্সও গঠন করেছে যার লক্ষ্য লোহিত সাগরের ট্রানজিট রুটে জাহাজ চলাচলের নিরাপত্তা রক্ষা করা। হুথিদের সাথে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা জোটের হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনায় ব্যাপক উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে।