রাজধানীর পুরানা পল্টনে বায়তুল মোকাররম এলাকায় বসে রাজধানীর বৃহৎ খেজুরের মার্কেট। নানা ধারনের খেজুরের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়িরা। এর মধ্যে রয়েছে, মমতাজ মরিয়ম, আজওয়া, আম্বার, মাবরুম, জাহেদি, কালমি ইত্যাদি। যা আসে সৌদি আরব ছাড়াও জর্ডান, মিশর, দুবাই, আলেজেরিয়া, তিউনিশিয়া, লেবানন, পাকিস্তানসহ বেশকিছু দেশ থেকে। জাতভেদে এসব খেজুর বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত। এর মধ্যে সর্বনিম্ন দামের খেজুর দাবরাস বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকা। এছাড়াও মরিয়ম ৭০০-৮০০ টাকা, আম্বার ৮০০-১০০০ টাকা কেজি দাম চাচ্ছেন বিক্রেতারা। যা গেল বছরে ২০০-৩০০ কমে বিক্রি হয়েছে।
এদিকে, আমদানিকারকরা বলছেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) খেজুরকে বিলাসী পণ্য হিসেবে শুল্ক নির্ধারণ করেছে, খেজুর আমদানি করতে প্রকৃত দামের প্রায় দ্বিগুণ শুল্ক দিতে হয়। সাম্প্রতি এফবিসিসিআই আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ১১০ টাকা কেজি দরে আমদানি করা খেজুরে শুল্ক দিতে হয় ১৪০ টাকা। পরে এটি বাজারে বিক্রি হয় ২৫০ টাকায়। একইভাবে ১২০ টাকা কেজির খেজুরে ২১০ টাকা শুল্ক দিয়ে বাজারে ৩৩০ টাকায় বিক্রি করতে হয়। এজন্যই বাজারে খেজুরের দাম এত বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই শুল্ক যুক্ত করা হয়েছে। অথচ গত বছর এক কেজি খেজুরে মাত্র ১০ টাকা শুল্ক দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, ইফতারের সময় মুসলমানরা অন্তত দুই-তিন টুকরো খেজুর খেয়ে থাকেন। গত ৩৫ বছর ধরে আমি খেজুর আমদানি করি, কিন্তু কখনও শুল্ক দিতে হয়নি। আমি খেজুর আমদানি করলাম ৯০০ থেকে ১০০০ ডলারে। চট্টগ্রামের কাস্টম কমিশনার সাধারণ কনটেইনার খেজুরের জন্য ২৫০০ ডলার এবং হিমায়িত কনটেইনারে খেজুরের জন্য ৪০০০ ডলার শুল্ক নির্ধারণ করেছে। এতে খেজুরের দাম দুই থেকে তিনগুণ বেড়ে গেছে। আমরা এনবিআর-এ কথা বলেছি, তারা কোনো যুক্তি দেখাতে পারল না কেন এটার শুল্ক ২৫০০/৪০০০ করল। এই অ্যাসেসমেন্টে এক কার্টন খেজুর আমাকে বিক্রি করতে হবে সাড়ে ৪০০০ টাকায়, কেজি পড়বে ৪৫০ টাকা। আসলে আমরা সবাই যদি সহযোগিতা না করি, তাহলে বাজারে খেজুরের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে দাম রাখতে পারব না।
ফলমন্ডিতে ইজেড নাগাল ব্র্যান্ডের খেজুর পাঁচ কেজির প্যাকেট বিক্রি হয়েছে দুই হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার ২৫০ টাকায়, আলজেরিয়ান ডেটলাইন নাগাল ১০ কেজির প্যাকেট তিন হাজার ২০০ থেকে তিন হাজার ২৫০ টাকা, তিউনিসিয়ান টেটকো ফরিদি পাঁচ কেজির প্যাকেট বিক্রি হয়েছে দুই হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার ২৫০ টাকা। সৌদিয়ান মাশরুখ বিনা ব্র্যান্ডের পাঁচ কেজির খেজুর বিক্রি হয়েছে সাড়ে তিন হাজার থেকে তিন হাজার ৬০০ টাকা। মাশরুখ-বি ব্র্যান্ডের পাঁচ কেজির খেজুর বিক্রি হয়েছে আড়াই হাজার থেকে দুই হাজার ৫৫০ টাকায়। মাশরুখ ভিআইপি বিক্রি হয়েছে পাঁচ কেজি দুই হাজার ৬৫০ টাকায়।
অপরদিকে দেশের বাজারে যখন অস্থির খেজুরের বাজার তখন পবিত্র রমজান মাসকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) খেজুরের ৪০ শতাংশ পর্যন্ত দাম কমেছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে আরব আমিরাতে প্রায় ৪০ শতাংশ ছাড়ে পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও ফিলিস্তিন, জর্ডান এবং সৌদি আরবের মাজদুল খেজুর প্রতি কেজি পাওয়া যাচ্ছে ২০ দিরহামে। মাত্র কয়েকদিন আগে প্রতি কেজি এই খেজুরের দাম ছিল ৩০ দিরহাম। একইভাবে, রুটাব খেজুর সাধারণত ৬০ দিরহামে ৩ কেজি কিনতে পাওয়া গেলেও এখন রমজানের আগে ওই একই পরিমাণ খেজুরের দাম কমে ৪৫ দিরহামে নেমে এসেছে।