• অভিযোগের প্রমাণ পায়নি তদন্ত কমিটি, কর্তৃপক্ষের ভিন্ন সুর
• কোচিং-প্রাইভেট নিরুৎসাহিত করার সুপারিশ তদন্ত কমিটির
• পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার জরুরি বৈঠক
আবারও আলোচনায় রাজধানীর ভিকারুননিসা স্কুল। এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুই বছর আগের যৌন নিপীড়নের অভিযোগ হঠাৎ করে সামনে নিয়ে আসাকে কেন্দ্র করে তোলপাড় চলছে এই প্রতিষ্ঠানটিতে। ভিকারুননিসার আজিমপুর শাখার গণিতের শিক্ষক মুরাদ হোসেন সরকার চাকরিচ্যুতির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটির প্রধানের কাছে জমা পড়েছে মুরাদ সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন। ১৭০ জনের মতো শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলার পর প্রতিবেদন দিয়েছে কমিটি। যেখানে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের প্রমাণ না পাওয়ার কথা না বলা হলেও কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী অফিসিয়াল চিঠিতে প্রাথমিক প্রমাণের কথা বলেছেন।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে একাধিকবার কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরীর মোবাইলে কলা করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি হোয়াটসআপে ফোন করা হলেও সাড়া মেলেনি।
তবে আজিমপুর শাখার প্রধান সাবনাজ সোনিয়া কামাল ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘চিঠিতে যা লেখা হয়েছে তা সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করে অধ্যক্ষ লিখেছেন। এখানে আমার কোনো ভূমিকা নেই।’
প্রতিষ্ঠানটির একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিছুদিন পরপর ভিকারুননিসার একেক জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিশেষ করে যৌন হয়রানির অভিযোগ আসায় তারাও বিব্রত। তবে সবগুলো অভিযোগ মিথ্যা তাও যেমন ঠিক নয়, তেমনি সব সত্য তাও মানতে নারাজ শিক্ষকরা। এর পেছনে প্রাইভেট এবং কোচিং করানো নিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের হাত রয়েছে বলে মনে করেন খোদ শিক্ষকরা।
এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির সবগুলো শাখা কেন্দ্রিক গড়ে ওঠা শিক্ষকদের সিন্ডিকেট অন্য সহকর্মীদের কোনঠাসা করতে বিভিন্ন সময় অভিযোগ সামনে নিয়ে আসেন এমনটাও বলছেন শিক্ষকরা।
ভিকারুননিসার আজিমপুর শাখার তিন ছাত্রী ও অভিভাবক গত ৭ ফেব্রুয়ারি নিপীড়নের লিখিত অভিযোগ দেন নাম মুরাদ হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে। এরমধ্যে একজন দুই বছর আগে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন এমন বর্ণনা দিয়ে শিক্ষক মুরাদের বিচার চান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আজিমপুর শাখার জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বলেন, ‘প্রাইভেট আর কোচিং ভিকারুননিসাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এর থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে কে রক্ষা করবে তা আমরা জানি না।’
সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সভাপতি ও ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলামকে রোববার সন্ধ্যায় একাধিকবার ফোন করা হয়। তবে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
জানা গেছে, ভিকারুননিসার আজিমপুর শাখার তিন ছাত্রী ও অভিভাবক গত ৭ ফেব্রুয়ারি নিপীড়নের লিখিত অভিযোগ দেন নাম মুরাদ হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে। এরমধ্যে একজন দুই বছর আগে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন এমন বর্ণনা দিয়ে শিক্ষক মুরাদের বিচার চান।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর শাখার প্রধান সাবনাজ সোনিয়া কামালের কাছে দেয়া লিখিত অভিযোগ নিয়ে শুরুতেই পক্ষে-বিপক্ষে নানা আলোচনা শুরু হয় প্রতিষ্ঠানটিতে। একপক্ষে অভিযোগ পেয়েই দ্রুত শিক্ষক মুরাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তোলেন।
অন্যদিকে শিক্ষকদের কেউ কেউ এত পরে এসে অভিযোগ দেয়া নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে এ নিয়ে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেন।
জানা গেছে, অভিযোগ পাওয়ার পরদিন অধ্যক্ষ তিন সদস্যের প্রাথমিক তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির আহ্বায়ক আইসিটি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মমতাজ বেগম। সদস্য পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ফারহানা খানম ও ইংরেজি প্রভাতী শাখার শাখাপ্রধান শামসুন আরা সুলতানা।
গত বৃহস্পতিবার কমিটি অধ্যক্ষের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। যেখানে যৌন নিপীড়নের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়। তবে অভিযুক্ত শিক্ষক মুরাদকে আজিমপুর শাখা থেকে অন্যত্র বদলির সুপারিশ করেছে কমিটি। পাশাপাশি লাভলী ইসলাম ও কানিজ ফাতেমা নামের দুজন শিক্ষককেও অন্য শাখায় বদলির সুপারিশ করা হয়েছে। এদের দুজনের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ।
২০১০ সাল থেকে আজিমপুরের দিবা শাখায় কর্মরত আছেন গণিতের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মুরাদ হোসেন। পাশাপাশি আজিমপুর এলাকার একটি ফ্ল্যাটে কোচিং সেন্টার খুলে ছাত্রী পড়াতেন। মুরাদ সরকারের সঙ্গে প্রাইভেট-কোচিং সংক্রান্ত বিষয়ে এই দুই নারী শিক্ষকের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব রয়েছে বলেও তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে ছাত্রীদের সঙ্গে পুরুষ শিক্ষক ও কর্মচারীদের আচরণবিধি নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো, কোচিংয়ের বিষয়ে শিক্ষকদের নিরুৎসাহিত করা, শাখা প্রধানদের মনিটরিং বাড়াতে হবে বলেও সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
ভুক্তভোগী ছাত্রীদের অভিভাবকদের অভিযোগ, কোচিংয়ের সময় তিনি শিক্ষার্থীদের নানাভাবে যৌন হয়রানি করতেন। অবশ্য মুরাদ হোসেন ভালো শিক্ষক বলেও শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা স্বীকার করছেন। কিন্তু হঠাৎ করেই এমন অভিযোগ সামনে এনে শিক্ষার্থীরা তার স্থায়ী বহিষ্কার ও বিচারের দাবিতে প্রতিষ্ঠানের গেইটে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে।
রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি শুরুর কিছু সময় পর কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী এসে শিক্ষার্থীদের বিচারের আশ্বাস দেন। পরে বেলা তিনটার দিকে আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা দেয় শিক্ষার্থীরা।