ত্রিপোলির বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে এসব তথ্য নিশ্চিত হয়েছে ঢাকা পোস্ট। লিবিয়ার স্থানীয় সময় সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দূতাবাসের একটি টিম তিউনিসিয়ার উপকূল এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে বাংলাদেশিদের মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে।
দূতাবাসের এক কর্মকর্তা জানান, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি একটি অভিবাসী দল নৌকায় করে রাত সাড়ে ১১টায় (স্থানীয় সময়) লিবিয়ার জুয়ারা উপকূল থেকে ইউরোপের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। যাত্রাপথে নৌকাটি তিউনিসীয় উপকূলে গেলে মধ্যরাত ৪টা ৩০ মিনিটে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। নৌকাটিতে মোট ৫৩ জন ছিল। এদের মধ্যে ৫২ জন যাত্রী এবং একজন ছিল নৌকার চালক।
দূতাবাসের এ কর্মকর্তা জানান, দুর্ঘটনার পর চালকসহ ৫৩ জনের মধ্যে ৪৪ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে ২৭ জন বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছেন। বাকিদের মধ্যে পাকিস্তানের ৮ জন, সিরিয়ার ৫ জন, মিসরের ৩ জন ও নৌকা চালক রয়েছেন (মিশরীয় নাগরিক)। ওই ঘটনায় নৌকায় থাকা ৯ জন যাত্রী মারা গেছেন। এদের মধ্যে ৮ জন বাংলাদেশি নাগরিক।
মারা যাওয়া ৮ বাংলাদেশির পরিচয়
১) সজল, গ্রাম- শেনদিয়া, ডাক- খালিয়া, উপজেলা : রাজৈর, জেলা : মাদারীপুর।
২) নয়ন বিশ্বাস, বাবা : পরিতোষ বিশ্বাস, গ্রাম : কদমবাড়ি উত্তরপাড়া, ডাকঘর : কদমবাড়ি, উপজেলা : রাজৈর, জেলা : মাদারীপুর।
৩) মামুন সেখ, গ্রাম : সরমঙ্গল, ডাকঘর : খালিয়া (টেকেরহাট ১ নম্বর ব্রিজ), উপজেলা : রাজৈর, জেলা : মাদারীপুর।
৪) কাজি সজীব, বাবা : কাজী মিজানুর, মা : রেণু বেগম, গ্রাম : তেলিকান্দি, ইউনিয়ন : বাজিতপুর নতুন বাজার, উপজেলা : রাজৈর, জেলা : মাদারীপুর।
৫) কায়সার, গ্রাম : কেশরদিয়া, ইউনিয়ন : কবিরাজপুর, উপজেলা : রাজৈর, জেলা : মাদারীপুর।
৬) রিফাত, বাবা : দাদন, গ্রাম : বড়দিয়া, ইউনিয়ন : রাগদী, উপজেলা : মুকসুদপুর, জেলা : গোপালগঞ্জ।
৭) রাসেল, গ্রাম : ফতেহপট্রি, ইউনিয়ন : দিগনগর, উপজেলা : মুকসুদপুর, জেলা : গোপালগঞ্জ।
৮) ইমরুল কায়েস আপন, বাবা : মো. পান্নু শেখ, মা : কামরুন্নাহার কেয়া, গ্রাম : গয়লাকান্দি, ইউনিয়ন : গঙ্গারামপুর গোহালা, উপজেলা : মুকসুদপুর, জেলা : গোপালগঞ্জ
মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি
মনতোষ সরকার, বাবা : মনোরঞ্জন সরকার, মা : কণিকা সরকার, গ্রাম : আমগ্রাম, ডাকঘর : আমগ্রাম, উপজেলা : রাজৈর, জেলা : মাদারীপুর।
এছাড়া পাসপোর্টবিহীন বাংলাদেশি রয়েছেন ৭ জন।
ত্রিপোলির বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা এবং চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে দূতাবাস তিউনিসিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এবং আইওএমের (আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা) সঙ্গে কাজ করছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার তথ্যমতে, বিভিন্ন দেশের উপকূল থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাওয়ার প্রচেষ্টায় গত বছর (২০২৩) ৩ হাজারের বেশি অভিবাসী মৃত্যুবরণ করেছেন এবং নিখোঁজ হয়েছেন।
ত্রিপোলির বাংলাদেশ দূতাবাস বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ অবৈধ অভিবাসনের বিষয়ে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। লিবিয়া ও তিউনিসিয়ার নৌবাহিনী তাদের ওপর কঠোর নজরদারি জোরদার করেছে। ফলে বর্তমানে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাত্রা অত্যন্ত বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ।