এবারের সংসদে ৫০টি সংরক্ষিত আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ পাচ্ছে ৪৮টি৷ ইতোমধ্যে প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে ক্ষমতাসীন দল। ৫০ হাজার টাকা মূল্যের মনোনয়ন ফরম কিনে নিজেকে সংরক্ষিত আসনের প্রার্থী হিসেবে জানান দিয়েছেন এক হাজার ৫৪৯ জন।
সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে আওয়ামী লীগ কাদের বেছে নিতে পারে সেটা নিয়ে রয়েছে নানা আলোচনা। শেষ মুহূর্তে সংক্ষিপ্ত তালিকায় উচ্চারিত হচ্ছে অনেকের নাম। তাদের একজন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা। কয়েক দফা বিভিন্ন উপ-নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম তুলেও দলের দৃষ্টিতে আসতে পারেননি তিনি। সবশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও মনোনয়ন ফরম তুলেছিলেন এই নেত্রী। তবে মনোনয়ন জোটেনি। আলোচনা আছে, সংরক্ষিত আসনে কপাল খুলতে পারে এই চিকিৎসকের।
লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে ফরিদুন্নাহার লাইলী, গাইবান্ধা-১ আসনে আফরোজা বারী এবং গাইবান্ধা-২ আসনের মাহবুব আরা গিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার টিকিট পেয়েছিলেন। পরে দলের পক্ষ থেকে শরিকদের আসন ছেড়ে দেওয়া হলে পিছু হটতে হয় তাদের। সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনে তারা তিনজনই এগিয়েই রয়েছেন।
আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত নন, এমন নারীরাও আওয়ামী লীগের হয়ে সংরক্ষিত আসনে বসতে চান। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ আছে দলের নেত্রীদের মাঝেই। আবার মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন সময়ে সমালোচিত।
যুব মহিলা লীগের সাবেক কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপিকা অপু উকিল৷ তাদের মেয়াদে নিজের সংগঠনে নিজের বলয় সৃষ্টির অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, বর্তমানে সংগঠনের কোনো পদে না থাকলেও নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন এই নেত্রী। সাবেক নেত্রীর কথায় এখনো সংগঠনে অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ হয় বলে জানা গেছে৷ এ বিষয়ে জানতে অপু উকিলকে ফোন করা হলে তিনি কল ধরেননি।
সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন দৌড়ে থাকা এই নেত্রী মনোনয়ন নাও পেতে পারেন এমন আলোচনা রয়েছে৷ তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে তার আনাগোনা বেড়েছে৷
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাধারণ আসনে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন মিরপুরের আলোচিত নেত্রী সাবিনা আক্তার তুহিন। সংরক্ষিত আসনের সাবেক এই সংসদ সদস্য ভোটের মাঠে ভরাডুবির শিকার হন। এতে তাকে নিয়ে সমালোচনা তৈরি হয়। এবার সংরক্ষিত আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী তিনিও। তবে ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে তুহিন জানান, তিনি কারও কাছে তদবির করতে আগ্রহী নন।
সাবিনা আক্তার তুহিন বলেন, ‘যাদের কাজ কেউ জানে না, নেত্রীসহ সিনিয়র নেতারা যাদের কাজ সম্পর্কে জানেন না, তারা নিজেদের তুলে ধরার জন্য সিভি জমা দিচ্ছেন। আমার তো সেটার দরকার নাই। আমি কাজ করেছি, করছি, করব। নেত্রী আমাকে যেখানে রাখবেন, সেখানে থাকব।’
মনোনয়ন চান যুব মহিলা লীগের বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি শারমিন জাহান মেরী। অভিযোগ আছে, সংরক্ষিত আসন পেতে ‘লবিং’ চালিয়ে যাচ্ছেন এই নেত্রী। একই চেষ্টায় আছেন সংগঠনের নগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক শামীমা রহমান।
তবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ বলছে, অতীতের কাজের ওপর বিচার করেই মনোনয়ন জুটবে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘অনেকেই মনোনয়ন চাইবে এটাই স্বাভাবিক। মনোনয়ন দেবে মনোননয়ন বোর্ড। যার সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। মনোনয়ন বোর্ড সব কিছু বিবেচনা করে যারা যোগ্য তাদের বেছে নেবেন।’
আফজাল হোসেন বলেন, ‘যারা রাজনৈতিকভাবে বা ব্যক্তিগতভাবে সবার আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন, তাদের মনোনয়ন বোর্ড বেছে নেবে।’
আওয়ামী লীগের এই সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘মনোনয়ন চাইলেই মনোনয়ন হয় না। মনোনয়ন হয় দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা, কাজের আলোকে।’