বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলের ১৩৬ নম্বর রুমে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী।
জানা যায়, বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলের ১৩৬ নম্বর কক্ষে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা নবীন শিক্ষার্থীদের পরিচয় নিতে এসে এক পর্যায়ে ভুক্তভোগীকে বিবস্ত্র হতে বলে। এসময় ওই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী উলঙ্গ হতে অস্বীকৃতি জানালে তার ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়।
ভুক্তভোগীর সূত্রমতে, নির্যাতনের একপর্যায়ে তাকে রড দিয়ে আঘাত করতে থাকেন অভিযুক্তরা। পরে তাকে জোরপূর্বক বিবস্ত্র করে হাত উপরে উঠিয়ে টেবিলের উপর দাঁড় করে রাখা হয়। এভাবে রাত ৪টা পর্যন্ত তাকে নির্যাতন করা হয়। পরে নাকে খত ও তার বিছানা সামগ্রী কক্ষের বাইরে ফেলে দেওয়ার অভিযোগও তোলেন ওই ভুক্তভোগী।
ঘটনার পরদিন দুপুরে জিয়া মোড়ে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী ভুক্তভোগীর কাছে মাফ চায় অভিযুক্তরা। এসময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অভিযুক্তদের চড় থাপ্পড়ও মেরে বিষয়টার মধ্যস্থতা করেন।
এদিকে, বিষয়টি অস্বীকার করেন অভিযুক্ত মোহাম্মদ সাগর। তিনি বলেন, বিবস্ত্র করে নির্যাতনের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমি বুধবার হলের বাহিরে ছিলাম। এছাড়া মুদাসসির খান কাফি ও উজ্জল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, লালন শাহ হলে এরকম কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। প্রক্টর বরাবর কেউ অভিযোগ করেছে কি না জানি না। ছাত্রলীগের কেউ এর সঙ্গে জড়িত না। যদি এমনটাই ঘটে তাহলে বিষয়টা ব্যক্তিগত।
লালন শাহ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আকতার হোসেন বলেন, আমি খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করছি। ভুক্তভোগী যদি অভিযোগ দেয় অপরাধীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদত হোসেন আজাদ বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। কিন্তু যদি এমনটা ঘটে থাকে, তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি পাবে অভিযুক্তরা।
এ বিষয়ে ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরিন বলেন, বিষয়টিু শুনেছি। র্যাগিং বিষয়ে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা আছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ছাত্রত্ব চলে যেতে পারে অভিযুক্তদের।
প্রসঙ্গত, গত বছরের জুন মাসে একই হলের (লালন শাহ হল) একই কক্ষে এক শিক্ষার্থীকে বিবস্ত্র করে র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিচার চেয়ে প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও পরে ভয়ভীতি দেখিয়ে ভুক্তভোগীকে লিখিত অভিযোগটি উঠিয়ে নিতে বাধ্য করা হলে লিখিত অভিযোগ উঠিয়ে নেন তিনি।
এর আগে গত বছরের ১২ ফেব্রয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে ফুলপরি খাতুন নামে এক নবীন ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠে শাখা ছাত্রলীগ নেত্রী ও পরিসংখ্যান বিভাগের সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম, মোয়াবিয়া জাহান, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম ও ফাইন আর্টস বিভাগের হালিমা খাতুন উর্মীর বিরুদ্ধে। পরে অভিযোগ প্রমানিত হলে অভিযুক্ত পাঁচজনকে স্থায়ী বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।