দোকানটির মালিক মো. গোলাম মোস্তফা। মার্কেটটির শুরু থেকেই এখানে ব্যবসা করেন। এগারো বছর আগে চালের ব্যবসা শুরু করেছিলেন তিনি। করোনাকালে সে ব্যবসা ধ্বংস হয়ে গেছে। জীবিকার তাগিদে চালের দোকানকে দর্জির দোকান বানিয়েছেন। লম্বা আকারের দোকানের একাংশে বানিয়েছেন চায়ের দোকান। একই সঙ্গে দুই দোকান পরিচালনা করেন তিনি। লক্ষ্য- চড়ামূল্যের বাজারে পরিবার-পরিজন নিয়ে টিকে থাকা।
গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আয় ঠিক আছে। ব্যয় ঠিক নাই। প্রতিদিনই কোনো না কোনো জিনিসের দাম বাড়ে। আয় যতই করি লাভ নাই। হিমশিম খেতে হয়। এখন মধ্যবিত্তদের টিকে থাকা খুব কঠিন।’
গোলাম মোস্তফার মতো অনেকেই চড়া মূল্যের বাজার দরে কষাঘাতে জর্জরিত। মুখ তুলে অনেকেই না বলতে পারলেও বাজারের থলেই অনেক কিছু জানান দেয়।
শুক্রবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঢাকা উদ্যান হাজী জয়নাল আবেদিন মার্কেটের মাছ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারজুড়ে মাছের দোকান গোটা বিশেক। তবে দামি মাছের পরিমাণ কম।
একজন বিক্রেতা বলেন, এইখানে কম দামের মাছের চাহিদা বেশি। দামি মাছ এই এলাকার মানুষ কম খায়।
বাজারের মাত্র একটি দোকানে ইলিশ মাছ দেখা গেছে। সেগুলোও আকারে ছোট। আবার দোকানটিতে ক্রেতাদের ভিড় নেই।
পুরো বাজারের দৃষ্টি কেড়ে আছে পাঙ্গাশ মাছের দোকানি। ১৬০ টাকা কেজি দরে জীবিত পাঙ্গাশ মাছ বিক্রি করছেন এ বাজারের বিক্রেতারা। চড়া মূল্যের বাজারে কম দামে মাছ কিনতে উপচে পড়তে দেখা গেছে ক্রেতাদের।
মিনারা বেগম নামে একজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্যয়ের লাগাম টানতে পাঙ্গাশ মাছ খেতে শিখেছে তার পরিবারের সদস্যরা।
ঢাকা মেইলকে এই ক্রেতা বলেন, ‘আমার বাসায় আমার জামাই ছাড়া পাঙ্গাশ মাছ কেউ খাইতো না। এখন সবাই খায়। না খাইয়া উপায় নাই। অন্য মাছের অনেক দাম।’
মাছ বাজার থেকে বের হতেই মাংসের বাজার। রয়েছে তিনটি গরুর মাংসের দোকান। তবে ভিড় নেই।
মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে নগরের চাকরিজীবীরা বেতন পান। এ সময় অনেকেই গরুর মাংসের প্রতি ঝোকেন। তবে ব্যয়ের লাগাম টানতে সাড়ে সাতশো টাকার গরুর মাংস থেকে সরে এসেছেন অনেক ক্রেতাই।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আধা কেজি আর এক কেজি পরিমাণ গরুর মাংস কেনার খদ্দেরই বেশি।
এ সময় দুই কেজি গরুর মাংস কিনতে দেখা যায় সেলিনা বেগম নামে একজন ক্রেতাকে। ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে এই ক্রেতা বলেন, ‘মেয়ের শ্বশুর বাড়ির আত্মীয়রা আসবে। তাই গরুর মাংস কিনছি। তাগো তো আর ব্রয়লার মুরগী খাওয়ান যায় না। নইলে দুই কেজি মাংস কেনার সাধ্য আমার নাই।’
সেলিনা বেগমের মতো মধ্যবিত্তরা ভিড় করেছেন ব্রয়লার মুরগীর দোকানেই। ২১০ টাকা কেজি দরে ব্রয়লার মুরগী কিনছেন তারা।