দেশের ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৫ হাজার ৩৮০টি। এ ছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে অনুমোদিত ৬৭টি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ২৯৫টি।
মন্ত্রণালয় বলছে, প্রশ্নপত্র বহনকারী ট্রাংকে একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস রয়েছে, যার মাধ্যমে স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদফতর থেকে পরীক্ষাকেন্দ্রে আনা-নেওয়ার কার্যক্রম মনিটরিং করা হয়।
অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এমবিবিএস ভর্তিপ্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনা, প্রকৃত শিক্ষার্থীদের প্রতি হয়রানি ও অনিয়ম বন্ধ এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ভর্তিপ্রক্রিয়া ডিজিটালাইজেশনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারি মেডিকেল কলেজে বিগত কয়েক বছর অনলাইনে ভর্তিপ্রক্রিয়া সম্পন্নকরণ ও ডিজিটালাইজেশনের ফলে প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ হয়েছে এবং একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, সরকারি মেডিকেল কলেজের ধারাবাহিকতায় ভর্তিপ্রক্রিয়ায় অনিয়ম রোধ এবং শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় বন্ধে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তিপ্রক্রিয়ায় ডিজিটালাইজেশনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তিপ্রক্রিয়া ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে অনলাইন প্রক্রিয়ায় শুরু হওয়ায় প্রকৃত শিক্ষার্থীদের হয়রানি, অনিয়ম ও অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের পথ বন্ধ হয়েছে। মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিশ্চিতের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
পরীক্ষার দিন যেসব নির্দেশনা মানতে হবে পরীক্ষার্থীদের
১. ৯ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষার কেন্দ্র/ভেন্যুর গেট খোলা হবে সকাল আটটায়। পরীক্ষার দিন সকাল সাড়ে ৯টার পর কোনো পরীক্ষার্থী হলে প্রবেশ করতে পারবেন না।
২. পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্রের রঙিন প্রিন্ট কপি নিয়ে আসতে হবে।
৩. কেন্দ্র/ভেন্যুতে পরীক্ষার্থীদের (ছেলে ও মেয়ে) পৃথক পৃথক তল্লাশির ব্যবস্থা থাকবে। পরীক্ষার্থীরা প্রবেশপত্র ও বলপয়েন্ট কলম ব্যতীত অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে যাতে প্রবেশ করতে না পারেন, সে লক্ষ্যে মেটাল ডিটেক্টরের পাশাপাশি আর্চওয়ে দিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রবেশের বিষয়টি তদারক করা হবে।
৪. ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র/ভেন্যুতে সকাল আটটা থেকে শিক্ষার্থীরা প্রবেশ করতে ইনভিজিলেটর (কক্ষ পরিদর্শক) সকাল আটটা থেকে পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত কক্ষে অবস্থান করে প্রবেশপত্রে পরীক্ষার্থীর ছবির জলছাপ ও রঙিন ছবির সঙ্গে পরীক্ষার্থীর চেহারা মিলিয়ে পরীক্ষাকক্ষে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করবেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কেন্দ্রে উপস্থিত থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
৫. পরীক্ষার্থী, ইনভিজিলেটর, ভেন্যুর কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মন্ত্রণালয়/অধিদফতরের কর্মকর্তা কোনোভাবেই মোবাইল, ইলেকট্রনিক ডিভাইস, ব্লুটুথ, এয়ারফোন ইত্যাদি বহন করবেন না।
৬. ভর্তি পরীক্ষার হলে ভর্তি পরীক্ষাসংশ্লিষ্ট কাজের সঙ্গে জড়িত কেউ মুঠোফোন নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না।
৭. ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র/ভেন্যুতে ভর্তি পরীক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি প্রবেশ করতে পারবেন না।
৮. গত ১০ জানুয়ারি থেকে মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধের নির্দেশনার পর জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে অফলাইন কোচিং সেন্টার বন্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া অনলাইন কোচিং বন্ধ ও সাইবার অপরাধ রোধকল্পে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
৯. পরীক্ষার দিন পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোর আশপাশের ফটোকপির মেশিন বন্ধ থাকবে। পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেকোনো প্রকার অসদাচরণ/প্রতারণা/গুজব ছড়ানোর সঙ্গে জড়িত কাউকে চিহ্নিত করা গেলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এর আগে মেডিকেল কলেজগুলোয় এ বছর এমবিবিএসে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে অনলাইনে আবেদনের সুযোগ ছিল ২৩ জানুয়ারি। ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি জমা দেওয়া যাবে ২৪ জানুয়ারি রাত ১২ পর্যন্ত।
ভর্তি পরীক্ষা যত নম্বরের—
লিখিত ভর্তি পরীক্ষায় ১০০টি প্রশ্নের প্রতিটি ১ নম্বর করে মোট (এইচএসসি বা সমমান সিলেবাস অনুযায়ী) ১০০ নম্বরের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। বিষয়ভিত্তিক বিভাজন পদার্থবিদ্যা ২০, রসায়নবিদ্যা ২৫, জীববিজ্ঞান ৩০, ইংরেজি ১৫ ও সাধারণ জ্ঞান (বাংলাদেশের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধ) ১০ অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে। লিখিত পরীক্ষার প্রতিটি ভুল উত্তর প্রদানের জন্য শূন্য দশমিক ২৫ নম্বর কাটা যাবে। লিখিত পরীক্ষায় ৪০ নম্বরের কম পেলে অকৃতকার্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে। ভর্তি পরীক্ষায় ৪০ নম্বরের কম পেলে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তির যোগ্য বিবেচিত হবেন না।
এমবিবিএস ও বিডিএসে পাস নম্বর ৪০
এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম নম্বর (পাস নম্বর) গতবারের মতো এবারও ৪০ রাখা হয়েছে। মাইগ্রেশনের সময় তিনবার পাবেন শিক্ষার্থীরা। বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তির জন্য সব কলেজকে উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা সব কলেজে চয়েজ একবারে দিতে পারবেন, সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতেও একই নিয়ম বহাল।
দ্বিতীয়বার ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের কত নম্বর কাটা
২৪ ডিসেম্বরের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি থাকা দ্বিতীয়বার ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ১০ নম্বর কাটা হবে। এ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় জেলা কোটা বাতিল করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নির্ধারিত সময়ে আসন পূরণ করা না গেলে সেসব আসনে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সভা সূত্রে জানা গেছে, অনেকেই মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেন। পরবর্তী সময় ভালো কোথাও ভর্তির সুযোগ পেলে আগের আসনটি ফাঁকা হয়ে যায়। এতে সরকারের অর্থ অপচয় হয়। এ বিষয়ে কঠোরতার জন্য মেডিকেল ও ডেন্টালে ভর্তি থাকা দ্বিতীয়বার ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ১৫ নম্বর কাটা নিয়ে আলোচনা হয়। পরে সবার পরামর্শে ১০ নম্বর কাটার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় নিরুৎসাহিত করতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি নেই, এমন শিক্ষার্থীদের মধ্যে দ্বিতীয়বার ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্য আগের মতো ৫ নম্বর কাটার সিদ্ধান্ত বহাল আছে।
জানা গেছে, মেডিকেলের মোট আসনের ২০ শতাংশ বরাদ্দ থাকে জেলা কোটায় আবেদন করা শিক্ষার্থীদের জন্য। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে এ সুযোগ পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা।